ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে নয়াবাজার, ধোলাইখাল ও ধুপখোলা কোরবানির পশুর হাট ঘুরে সকাল থেকেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড় আরও বাড়ে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাট ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ট্রাক বোঝাই গবাদি পশু নেমেছে। তাই পশু যদি এভাবে রাজধানীতে আসতেই থাকে তাহলে আরও দাম কমতে পারে। আবার অনেকে যেহেতু এখনও কোরবানির পশু কিনেননি, ফলে সবাই এক সাথে শেষ মুহূর্তে বাজারে এলে দাম বাড়তেও পারে।
শনিবার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের সাথে গবাদি পশুগুলোকে সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও তাদের পছন্দসই পশু ক্রয় করেত একটার পর একটা দেখছেন এবং সাধ্যের মধ্যে কিনতে বিক্রেতাদের সাথে দর কষাকষি করছেন। অনেকে কিনে বাসার উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছেন।
পাবনা থেকে নয়াবাজারের হাটে গত বুধবার ৫০টি ষাঁড় নিয়ে এসেছিলেন গরু ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান। তার মধ্যে আর মাত্র ১৯টি অবশিষ্ট রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ৫০টি গরু নিয়ে আসছিলাম। তার মধ্যে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ৩১টি ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছি। আর বাকি ১৯টি কালকের মধ্যে বিক্রি করে বাসায় ফিরে পরিবারের সাথে ঈদ করব।’
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের একটি ডেইরি ফার্মের ফেরদৌস আহমেদ ইউএনবিকে জানান, তিনি গ্রাম থেকে তিনটি ষাঁড় ভালো দামে বিক্রির আশায় কয়েকদিন আগে ঢাকায় আনেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল চার লাখ ৬০ হাজার টাকায় মান্না নামে একটি ষাঁড় বিক্রি করেছি। এখন ডিপজল নামে আরেকটি সাত লাখ টাকায় বিক্রির জন্য ক্রেতাদের সাথে দর কষাকষি হচ্ছে।’
‘গরু লালন-পালন করা আমার শখ। আমি এসব ষাঁড়ের সর্বোচ্চ পরিচর্যা করেছি। যেহেতু গরু লালন-পালন করা আমার শখ, তাই খরচ বাদ দিয়ে খুব অল্প লাভেই বিক্রি করছি,’ যোগ করেন তিনি।
গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর দামও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ফেরদৌস।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা আরেক ডেইরি ফার্মের মনজুরুল ইসলাম জানান, ক্রেতারা খুবই অল্প দাম থেকে দর কষাকষি শুরু করায় তারা একদম শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বছর ৪০টি গরু নিয়ে এসেছিলাম। গতকাল খুবই কম দামে মাত্র দুটি ষাঁড় বিক্রি করতে পেরেছি। এখন লাভ-লোকসান যাই হোক আগামীকালের মধ্যে সবগুলো বিক্রি করতে হবে।’
ধুপখোলার হাটে শরীয়তপুর থেকে আসা ইমরান ব্যাপারী বলেন, তিন দিন আগে ১৮টি গরু নিয়ে ঢাকায় আসেন। যার মধ্যে কয়েকটি বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা গবাদি পশুকে শুধু সবুজ ঘাস, খৈল আর ভুসি খাওয়াই। তাই মোটাতাজা করার জন্য ইনজেকশনের প্রয়োজন হয় না।’
নয়াবাজার হাটে আসা হাবিবুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, তারা এক লাখ ১০ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় কিনেছেন। ভারত থেকে গরু না আসায় অন্য বছরের চেয়ে এবার দাম বেশি।
‘যেহেতু শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দিচ্ছি, তাই টাকা কোনো ব্যাপার নয়। আমরা প্রতি বছরই কোরবানি দেই, তাই এবারও দিচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
ধুপখোলায় আসা রশিদ খান নামে আরেক ক্রেতা জানান, তিনি কোরবানির জন্য এ বছর দুটি ছাগল কিনেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর গরু কোরবানি দিতাম। এবার ২১ হাজার টাকায় দুটি ছাগল কিনেছি।’
পুরান ঢাকার নয়াবাজার পশুর হাটের ইজারাদার বাপ্পী মুরাদ জানান, চাহিদা বেশি থাকায় মধ্যম মানের গরু তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় এখনো দাম স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, তার হাটে সাধারণত ছোট আকারের গরু ৫০-৮০ হাজার, মধ্যম আকারের এক থেকে দুই লাখ এবং বড় গরু আড়াই থেকে আট লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে ক্রেতারা কম দামের আশায় এখনো হাট পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে ইজারাদার বাপ্পী বলেন, বাড়িতে পশু রাখার জায়গা না থাকায় অনেক ক্রেতাই আগে থেকে পশু কেনেন না। ফলে ঈদের আগের দিন রবিবার ব্যাপক বেচাকেনা হবে।
দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে ঢাকায় এবার ২৫টি কোরবানির পশু বেচাকেনার হাট বাসানো হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে তিনটি বেশি। তার মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে ১৪টি রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার ঈদুল আজহায় এক কোটি ১০ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে এক কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি পশু প্রস্তুত রয়েছে।