জেলার উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মধূপুর গ্রামের ছেলে রেজাউল ইসলাম রেজা। চার বছর আগে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু করেন ছাগলের খামার। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে ১৫০টি ছাগলের ৭৫টি পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ক্ষতি হয় প্রায় তিন লাখ টাকা।
এরপর ইউটিউবে বেইজিং হাঁস সম্পর্কে জেনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন রেজা। কুড়িগ্রাম হাঁস প্রজনন কেন্দ্রে হাঁস না পেয়ে লালমনিরহাট থেকে এক উদ্যোক্তার কাছ থেকে ২শ’ ডিম পাড়া বেইজিং হাঁস কিনেন। হাঁসের চলাচলের জন্য দেড় একর জমিতে তিনটি বড় পুকুর তৈরি করেন।
পরে ইউটিউবে বেইজিং হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোঁটানের পদ্ধতি দেখে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে ৩০০ বাচ্চা ফোটানোর মত ইনকিউবেটর মেশিন উদ্ভাবন করেন। এতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ২৮ দিন পর বাচ্চাগুলো খোলস থেকে বেড়িয়ে আসার পর সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেন। লভ্যাংশ বেড়ে যাওয়ায় ছোট ইনকিউবেটর ভেঙ্গে এখন ৫ হাজার ও ১২ হাজার বাচ্চা ফোটানোর ইনকিউবেটর তৈরি করেন। এতে তার খরচ হয় ৫ লক্ষ টাকা। প্রতিটি বাঁচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বিক্রি করছেন ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়। মাসে তার ১৩ হাজার বাচ্চা বের হয়ে আসে। মাসে তার আয় হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা।
কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, সিলেট,চট্টগ্রাম, ভৈরব, হবিগঞ্জ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট থেকে ক্রেতারা এসে রেজার কাছ থেকে হাঁসের বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ৩টি পুকুর থেকে বিনা খরচে বছরে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
রেজার বাবা জানান, শুধু চাকরির পিছনে না খেটে নিজের ও এলাকার জন্য কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়েই ছেলেকে ছাগলের খামার শুরু করার পরামর্শ দেন। ছাগলের খামারে সাফল্য না পেলেও থেমে না থেকে নতুন কিছু করার সাহস জোগান বাবা। এরপর শুরু হয় রেজার নতুন প্রজেক্টটি। এই খামারে নিয়মিত ৪ জন এবং প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ৯ জন লোক কাজ করছেন।
হাঁসের বাচ্চার ডিম তৈরির ইনকিউবেটর মেশিন দেখে রংপুরে একজন আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ১৫ হাজার বাঁচ্চা,নীলফামারীতে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে ১৩ হাজার বাচ্চার এবং সিলেটে ১০ হাজার বাচ্চা ফোটানের মেশিন তৈরি করে দিয়েছেন রেজা। স্নাতক পাশ করা ছেলের কর্মকাণ্ডে পরিবার ও প্রতিবেশিরা এখন খুব খুশি।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় প্রতিদিনই রেজার হাঁসের খামার দেখতে তরুণরা আসছে। তার এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক। সরকারি সহযোগিতা পেলে খামার বড় করে স্থানীয় আরো শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে মনে করেন অনেকে।
এ ব্যাপারে জেলার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার রেজার সাফল্যের কথা স্বীকার করে বেইজিং হাঁসের মাংস বাজারজাত করতে প্রচারণার পাশাপাশি ঋণসহ সরকারি সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।