এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে বিমানবন্দরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বেবিচক।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মহিবুল হক ইউএনবিকে জানান, এখন থেকে বিমানবন্দরে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করবেন, তারা বিমানবন্দরের ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিমানবন্দরে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে।
‘নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন না। আমরা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবো,’ যোগ করেন তিনি।
সচিব জানান, এর আগে বিমানবন্দরের ভেতরে যাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল তারা মোবাইল ফোন বন্ধ রাখার শর্তে মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখতে পারতো, কিন্তু মোবাইল ফোনটি আদৌ বন্ধ থাকতো কিনা এ বিষয়ে কোনো মনিটরিং ছিল না। তাছাড়া একজন মোবাইল ফোন সাইলেন্ট করে রাখলেও ফোন যখন আসবে তখন ভাইব্রেশনের শব্দে তার দৃষ্টি অন্যদিকে চলে যেতে পারে। এজন্য নিরাপত্তার স্বার্থেই এখন থেকে নিরাপত্তা কর্মীদের বিমানবন্দরের ভেতর মোবাইল ফোন নেয়া নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যারা নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে তাদেরকে মোবাইল ফোন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জমা দিয়ে দায়িত্বপালন করতে হবে। যদি তার কোনো জরুরি ফোন আসে তখন কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়ে দেবে।
এছাড়াও নিরাপত্তা কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সচিব বলেন, ‘নিরাপত্তায় আমরা এখন কোনো রকম ফাঁক রাখা হবে না। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ঘরোয়া ফ্লাইটে যাত্রীদের এখন তাদের ফটো আইডি দেখাতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী ফ্লাইট ‘ময়ূরপঙ্খী’ বিমান ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে পলাশ আহমেদ নামে এক যুবক যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিমানটিতে ১৪৮ জন যাত্রী ছিল।
পলাশ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে একটি খেলনা বন্দুক নিয়ে বিমানে উঠে যাত্রীদের জিম্মি করে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায় বলে বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়।
বিমানবন্দরে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মহিবুল হক বলেন, সিকিউরিটি ইনচার্জ এর দায়িত্ব যাদের থাকবে তাদের অনেক কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। স্ক্যানিংয়ের দায়িত্বে যারা কাজ করেন তাদের প্রতি ২০ মিনিট পর পর পরিবর্তন করার নিয়ম রয়েছে। এই বিষয়টা এখন থেকে খুব কঠোরভাবে মানা হবে। কারণ একজন মানুষ দীর্ঘক্ষণ স্ক্যানিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না।
এছাড়াও যারা স্ক্যানিংয়ের দায়িত্ব পালন করে তাদের চোখে ধাধা দিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু চলে যেতে পারে। সেজন্য তাদেরকে কাউন্সেলিং করা হবে বলেও জানান সচিব।
বিমান ছিনতাই চেষ্টা ঘটনা সম্পর্কে মহিবুল বলেন, প্রাথমিকভাবে তদন্তে দেখা গেছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় সন্দেহভাজন ছিনতাইকারীর কাছে একটি খেলনা পিস্তল ছিল। তার কাছে কোনো বিস্ফোরক ছিল না।
এছাড়া প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি বিমান ছিনতাইয়ের ওই দিনের ঘটনায় যারা স্ক্যানিংয়ের দায়িত্বে ছিল তাদের কিছুটা গাফিলতি ছিল। ওই দিনের ঘটনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বেবিচক।
‘ওই বিমানের পাইলট ও কেবিন ক্রুদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে ব্যক্তি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে, সে আসলে মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ ছিল না,’ যোগ করেন তিনি।
সচিব মহিবুল হক ইউএনবিকে জানান, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার দিনই পাঁচ দিন সময় বেধে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে আরও দুদিন সময় বৃদ্ধি করা হয়েছিল। গত বুধবার আরও পাঁচদিন সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি সময় বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হওয়ায় সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তবে এই তদন্ত কমিটির সময় আর বৃদ্ধি করা হবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে গত ৫ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের পিস্তল থাকা ব্যাগসহ নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মহিবুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দিন স্ক্যানিংয়ের সময় যিনি দায়িত্বে ছিলেন তাকে দায়িত্বে গাফিলতির কারণ দেখিয়ে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, ‘এসব ২/১ টি ঘটনা যা ঘটেছে তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা বর্তমানে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি তাতে বহির্বিশ্বে আমাদের তেমন কোনো বদনাম হবে না। নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যাতে কোনো প্রশ্ন না থাকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
এ ঘটনা সম্পর্কে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান ইউএনবিকে জানান, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। স্ক্যানিংয়ের সময় দায়িত্বরত অপারেটর ফজলার রহমানকে কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।