পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এ পর্যন্ত ঘটা তিনটি লড়াইয়ের দুটি হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। গত ৫ আগস্ট থেকে কাশ্মিরকে অচল করে দেয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইমরান খান ‘বর্ণবাদী’ বলে অভিহিত করেন। ভারত অধ্যুষিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে মোদি সরকার। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্টভাবেই এর ওপর সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং সেখানে বসবাসকারীদের সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
এ অঞ্চলে গণগ্রেপ্তার, হাসপাতালগুলো বন্ধ রাখা এবং ‘কোনো খবর প্রকাশ করতে না দেয়ার’ কথা উল্লেখ করে খান বলেন, কাশ্মিরের জনগণকে ৫০ দিন ধরে ৯০০,০০০ সেনা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
‘আট মিলিয়ন জনগণকে একটি খোলা কারাগারে বন্দি করে রাখা অকল্পনীয় বিষয়’ উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে যখন সামরিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে তখন কী ঘটবে? সেখানে অবস্থানরত ৯০০,০০০ সৈন্য নিয়ে আমরা ভয়ে আছি, গণহত্যা মতো ঘটনা ঘটে যাবে।
১৯৪০ এর দশকের শেষের দিকে যখন ব্রিটেনের কাছ থেকে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করেছিল তখন থেকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে আছে। এ অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম ভারী অস্ত্রধারী সেনাবাহিনী, সৈন্য এবং আধাসামরিক পুলিশ দ্বারা টহল দেয়া হয়। এ অঞ্চলে ভারতীয় সেনার উপস্থিতির বিষয়টিতে বেশিরভাগ কাশ্মিরি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এই অঞ্চলটিকে বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে মুক্ত করার জন্য মোদি কাশ্মিরের পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করছেন এবং তার সমর্থকরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
খানের সাথে এর আগের এক বৈঠকের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘মোদি এবং খান মিলে কাশ্মিরের অচলঅবস্থা সমাধান করতে পারলেই বিষয়টি দুর্দান্ত হবে।’
এই সপ্তাহে খান বিশ্ব নেতাদের সাথে কাশ্মির বিষয়টি উত্থাপন করার কথা জানালেও তিনি মোদির সাথে কোনো সাক্ষাতের বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি।
খান বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে ভারত আজ একজন বর্ণবাদী ও হিন্দু আধিপত্যবাদী দ্বারা পরিচালিত, তারা মুসলমান নাগরিকদের সমানাধিকারী মনে করে না।’
ভারতীয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আকবরউদ্দীন সাম্প্রতিক এক সাক্ষাত্কারে মোদি ও খানের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা কম থাকার বিষয়টির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ‘নেতাদের সাক্ষাতের আগে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
‘পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে তা অবশ্যই পরিবেশ তৈরির পক্ষে অনুকূল নয়,’ তিনি বলেন।
পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মিরে পাকিস্তানিরা জঙ্গি শিবিরগুলোকে সক্রিয় করেছে এবং প্রায় ৫০০ জঙ্গি ভারতে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে বলে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত যে দাবি করেছেন তার পক্ষে কোনো প্রমাণ না দেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন খান।
খান এ দাবিগুলোকে ‘নিরর্থক’ বলেও অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর ৯০০,০০০ কর্মী আছে, সেখানে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের পাঠিয়ে কী সম্ভব সুবিধা নিতে পারবে? সেখানে যা হবে তা হলো কাশ্মিরের মানুষের ওপর আরও নিপীড়ন।’
খান আরও বলেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুরোধে, ট্রাম্প এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির মধ্যে পারমাণবিক স্থগিতাদেশের বিষয়ে মধ্যস্থতা করার কাজ শুরু করেছিলেন। অন্য কোনো বিষয়ে কথা না বলে, ট্রাম্প বলার পর, সোমবার ‘পরিস্থিতি শান্ত করতে’ খান রুহানির সাথে কথা বলেছেন, বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’