জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএইচইউ) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে সংক্রমণের দিক থেকে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত করোনার পর্যাপ্ত পরীক্ষা করছে না যা বিজ্ঞানীদের হতবাক করেছে এবং সংক্রমণের বিষয়ে সরকার থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ভারতে করোনাভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে পাঁচটি বিষয়:
১. আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি: লকডাউন তুলে নেয়ার পর থেকে দেশটিতে প্রতিদিনই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। ভাইরোলজিস্ট ডা. শহীদ জামিলের মতে, মানুষের মাঝে সংক্রমণের হারের প্রকৃত মাত্রা স্পষ্ট নয়।
ভারত সরকার মে মাসে ২৬ হাজার নমুনা সংগ্রহ করেছে যা প্রমাণ করে ভারতে তখন সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ ছিল।
ডা. জামিল বলেন, ‘আমরা যদি এটিকে পুরো জনসংখ্যায় স্থানান্তর করি তাহলে মে মাসের মাঝামাঝি সময়েই আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত এক কোটি।’
উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতি ২০ দিনে ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে, যা বর্তমান সংখ্যাকে ৩-৪ কোটিতে নিয়ে যাবে।
তবে সরকার বেশি সংখ্যক করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়ায় সম্প্রতি শনাক্তের সংখ্যাও বেড়েছে।
২. পর্যাপ্ত পরীক্ষা করছে না ভারত: ডা. জামিল দাবি করেছেন, ভারতে জনসংখ্যার তুলনায় মাথাপিছু পরীক্ষার সংখ্যা খুব কম।
কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে গবেষণা করা গণিতবিদ হিমাংশু তিয়াগি এবং আদিত্য গোপালান বলেন, অপর্যাপ্ত পরীক্ষা এবং রোগী শনাক্ত না হলে করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এপ্রিল মাসে ভারতের করোনা রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩.৮ শতাংশ, যা জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৮ শতাংশে।
৩. ভারতে করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যা আশাব্যঞ্জক: তথ্য অনুসারে, ভারতে শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে মারা যাওয়াদের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি।
ডা. জামিল বলেন, করোনা আক্রান্ত বা সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যার বিপরীতে ধীরে ধীরে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তবে সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়লে হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ বাড়বে যা মৃত্যুর হারও বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪. ভারতে মৃত্যুর হার খুব কম: রবিবার পর্যন্ত ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৩২ হাজার ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে দেশটির জনসংখ্যার তুলনায় অন্যান্য দেশের চাইতে মৃত্যুর হার কম।
ভারতের মৃত্যুর হার এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ যেমন- পাকিস্তান বা ইন্দোনেশিয়ার মতোই।
৫. ভারতের প্রতিটি রাজ্যে করোনার চিত্র ভিন্ন: করোনাভাইরাস সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ভারতের এক এক রাজ্যে এক এক রকম এবং সময়ের সাথে সাথে এটি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। এখন পর্যন্ত দেশটির মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর ৬০ শতাংশই শনাক্ত হয়েছে শুধুমাত্র দিল্লি, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ুতে।
তবে সম্প্রতি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্র প্রদেশেও করোনার তীব্র সংক্রমণ দেখা গেছে।
দেশের সব রাজ্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষা এবং এবং চিকিৎসা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।