ডনাল্ড ট্রাম্প (৭৬) শনিবার দাবি করেছেন যে তার গ্রেপ্তার আসন্ন এবং তার সমর্থকদের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প আরও দাবি করেন, নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী নারীদের থেকে গোপনে টাকা নিয়ে এই মামলার তদন্ত করছেন।
যদিও ট্রাম্পের আইনজীবী এবং মুখপাত্র বলেছেন যে প্রসিকিউটরদের কাছ থেকে তাদের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ করা হয়নি।
তবে, ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে ঘোষণা করেছেন যে মঙ্গলবার তাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
পরবর্তী একটি পোস্টে ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প তার বিরোধী বাইডেন প্রশাসনের বিপক্ষে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ওই পোস্টে বড় হাতের অক্ষরে তিনি লিখেছেন, ‘সময় এসেছে!!!’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা আর এটা হতে দিতে পারিনা। তারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করছে, আর আমরা বসে আছি এবং দেখছি। আমাদের অবশ্যই আমেরিকাকে বাঁচাতে হবে! প্রতিবাদ, প্রতিবাদ, প্রতিবাদ!!!’
আরও পড়ুন: ধর্ষণের অভিযোগের বইয়ের কোনো অংশ কখনো পড়েননি ট্রাম্প
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে বিদ্রোহের কিছুদিন আগে তিনি যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, প্রকারান্তরে তারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে তার এবারের পোস্টে।
সেদিন সকালে ওয়াশিংটনের একটি সমাবেশে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এই আহ্বান শোনার পর, তার সমর্থকরা ক্যাপিটলে হামলা করে এবং বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের হোয়াইট হাউস বিজয়ের কংগ্রেসনাল সার্টিফিকেশন বন্ধ করার চেষ্টা করে। তারা ক্যাপিটল ভবনের দরজা-জানালা ভেঙ্গে এবং অফিসারদের পিটিয়ে রক্তাক্ত রেখে যান।
অন্যদিকে, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ তার বিরুদ্ধে করা ট্রাম্পের অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
বরং সম্প্রতি তিনি ট্রাম্পকে গ্র্যান্ড জুরির সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ দেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন।
স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা ট্রাম্পের বিচার পরবর্তী সময়ের জননিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ট্রাম্পের বক্তব্যের পর এক ইমেইলে ব্র্যাগ বলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার অফিসে কাজ করা এক হাজর ৬০০ জন ব্যক্তি নিরাপদ থাকবে এবং ‘যে কোনও ধরনের হুমকিরই’ তদন্ত করা হবে।
তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের নিউইয়র্ক অফিসকে ভয় দেখানো বা আইনের শাসনের ওপর হুমকি দেয়ার চেষ্টাকে সহ্য করি না।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এ বিষয়েও আমরা আমাদের অন্য সকল তদন্তের মতোই সমান ও ন্যায্যভাবে আইন প্রয়োগ করবো এবং সময় হলেই জনসম্মুখে সব প্রকাশ করা হবে।’
এ মামলায় গ্র্যান্ড জুরির গোপন তদন্তের জন্য কোনও সময়সীমার কথা প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা: ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিচারের আহ্বান আইন প্রণেতাদের
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই বিচারকার্য সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কমপক্ষে আরও একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য দেয়া বাকি রয়েছে।
ট্রাম্পের একজন আইনজীবী সুসান নেচেলেস বলেছেন, ট্রাম্পের পোস্টটি ‘মিডিয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে’ এবং একজন মুখপাত্র বলেছেন যে ব্র্যাগের অফিস থেকে ‘কোনও বিজ্ঞপ্তি’ আসেনি। এবং ট্রাম্পের মঙ্গলবার গ্রেপ্তার ওেয়ার আশঙ্কার কারণ এখনও অস্পষ্ট।
জেলা অ্যাটর্নি অফিস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ট্রাম্পের সহযোগী এবং আইনি দল অভিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যদি এমন হয়, তবে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা আগে বলেছিলেন যে তিনি স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করবেন। যার অর্থ সম্ভবত তিনি নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট প্রিন্সেন্টে বা সরাসরি ব্র্যাগের অফিসে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হবেন।
এটা স্পষ্ট নয় যে ট্রাম্পের সমর্থকরা তার প্রতিবাদের আহ্বানে সাড়া দেবেন কিনা।
ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্পের পোস্টগুলো সাধারণত টুইটারের চেয়ে অনেক কম জনপ্রিয়তা পায়।
তবে তার অনুগত অনেক সমর্থক রয়েছে।
আরও পড়ুন: সম্ভাব্য বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ট্রাম্প নথির পর্যালোচনা সম্পন্ন
তবে, গত ৬ জানুয়ারি দাঙ্গার পরে ট্রাম্পের শতাধিক অনুগত গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং ফেডারেল আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। এটাও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের আবেগ কমিয়ে দিতে পারে।
তার পোস্টের পরে, রিপাবলিকান হাউস স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচার করার যে কোনও পরিকল্পনাকে ‘একজন র্যাডিক্যাল ডেপুটি অ্যাটর্নির ক্ষমতার অশোভন অপব্যবহার’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি দাবি করেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ বশবর্তী হয়ে এই বিচার করছেন।
গ্র্যান্ড জুরি ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন সহ সাক্ষীদের কাছ থেকে শুনানি করছেন।
কোহেন বলেছেন, তিনি ২০১৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন নিগ্রহের বিষয়ে চুপ থাকার জন্য দুজন নারীকে অর্থ দিয়েছিলেন। এক দশক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল।
যদিও, ট্রাম্প এই অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কোনও ভুল করেননি এবং রিপাবলিকানদের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ডেমোক্র্যাটিক প্রসিকিউটররা তার বিরুদ্ধে ‘দাষ খুঁজছেন’।
ট্রাম্প ব্র্যাগকেও অভিযুক্ত করে বলেছে, ব্র্যা একজন কৃষ্ণাঙ্গ এবং একজন ‘বর্ণবাদী’।
তিনি প্রসিকিউটরকে অভিযুক্ত করে বলেছেনছেন যে তিনি ট্রাম্পের দিকে মনোনিবেশ করার সময় শহরে অপরাধ দমনের ব্যাপারে যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছেন না।
ব্র্যাগের অফিস পরীক্ষা করে দেখছে যে ভুক্তভোগীদের মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্পের কোম্পানি যেভাবে কোহেনকে দিয়ে ওই নারীদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল, সেক্ষেত্রে কোনও রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করা হয়েছে কিনা।