২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি (কপ২১) অনুযায়ী ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে ব্রাজিল। যদিও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর শাসনামলে এই প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
বৃহস্পতিবার দেশটির ১৮টি সরকারি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ সংস্থা ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কমিটি’- এই ঘোষণা দিয়েছে।
ব্রাসিলিয়ায় কমিটির বৈঠকে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ডো অ্যালকমিন বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জিং মুহুর্তে পৃথিবীকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ব্রাজিল একটি প্রধান ক্রীড়ানক।’
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে আমাদের পরিবর্তিত সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানো হবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা জলবায়ু পরিবর্তনের উপর বৈশ্বিক পদক্ষেপকে এগিয়ে নিতে কাজ করে।
এটি প্যারিস চুক্তি অনুসারে প্রতিটি দেশের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত দায় বা জাতীয় নির্গমন হ্রাস করার প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে নজরদারি করে।
উগ্র ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর আমলে ব্রাজিল দেশ হিসেবে তার গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে দুবার পিছিয়ে পড়ে।
অনেকগুলো পরিবেশ ও সামাজিক গোষ্ঠীর একটি নেটওয়ার্ক ক্লাইমেট অবজারভেটরি’র অনুমান অনুসারে, সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটেছে ২০২১ সালে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ব্রাজিল তার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন বেশি কার্বন নিঃসরণ নির্গমন। প্যারিস চুক্তির অধীনে ব্রাজিলের কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মেট্রিক টন।
একটি জলবায়ু নীতি-কেন্দ্রিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তালানোয়া ইনস্টিটিউট শুক্রবার তার নিজস্ব বিশ্লেষণ প্রকাশ করে বলেছেন, পুনরুদ্ধারকে নিছক একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ বলে দেখা হচ্ছে। এরজন্য আরও সাহসী প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
ইনস্টিটিউট বলেছে, চিরাচরিত নিয়মে বদ্ধ ঘরে বসে সিদ্ধান্ত না নিয়ে নির্গমন টার্গেট প্রক্রিয়াটি পুরো সমাজের সামনে উন্মুক্ত করা উচিত। এটি শুধুমাত্র ব্রাজিলের ২০১৫ সালের নেওয়া প্রতিশ্রুতি পুনর্বহাল করবে না, আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করতেও সক্ষম করবে।
ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের পরিচালিত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ক্লাইমেট ওয়াচ অনুসারে, ব্রাজিল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী, যা বিশ্বব্যাপী নির্গমনের প্রায় ৩ শতাংশের জন্য দায়ী।
এই নির্গমনের প্রায় অর্ধেক আমাজন রেইনফরেস্টের গাছ ধ্বংসের কারণে ঘটে, যা বলসোনারোর প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ১৫ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছিল।
সাবেক এই প্রেসিডেন্ট কৃষি ও ব্যবসা সম্প্রসারণের পক্ষে ছিলেন। তিনি আমাজন রেইনফরেস্ট সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করেন এবং ব্রাজিলের পরিবেশ সংস্থাগুলোকে ভেঙে দিয়েছিলেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটছেন।
তিনি জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বন উজাড় ৪৮ শতাংশ হ্রাস করেছেন।