শুনানিতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি সেই সামরিক শক্তির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবেন যারা এক সময় তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল।
এদিকে, শুনানি চলাকালে দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) বাইরে ‘স্টপ জেনোসাইড’ ব্যানার নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা সমর্থক জড়ো হন। তাদের কয়েকজনের হাতে সু চির ছবি এবং সেগুলোতে ‘শেইম’ ও ‘এজেন্ট অব মিলিটারি’ লেখা ছিল।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে। এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান গত অক্টোবর মাসে সতর্ক করে দেয় যে সেখানে গণহত্যার পুনরাবৃত্তির গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। সেই সাথে মিশন জানায়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আইনি অঙ্গনে মিয়ানমারের জবাবদিহি আদায় করা উচিত।
গণহত্যার অপরাধ বাড়িয়ে দেয়া বা এতে ইন্ধন দেয়ার মতো সব কার্যক্রম বন্ধে নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইসিজে-তে এ মামলা করে গাম্বিয়া। তারা ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
মিয়ানমারের তৎকালীন জান্তা সরকারের আমলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া সু চি শুনানি চলাকালে মনোযোগ সহকারে সামনের সারিতে বসে ছিলেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে দ্য হেগে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বুধবার আদালতে বক্তব্য দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মিয়ানমার তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। তবে জানিয়েছে যে যদি পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকে তাহলে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা প্রস্তুত আছে।
সম্প্রতি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিষয়টির জটিলতা ও মিয়ানমারের জনগণের ভাষ্য বোঝার ক্ষেত্রে ঘাটতির কারণে দেশটির ওপর নতুন আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যাসহ অপরাধের দায় অং সান সু চি-কে জনসম্মুখে স্বীকার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাতজন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী।
তারা বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে এসব অপরাধের নিন্দা না করে বরং অং সান সু চি সক্রিয়ভাবে অস্বীকার করে যাচ্ছেন যে এসব অপরাধ এমনকি কখনো ঘটেনি।
আইসিজে-তে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলা শুনানি উপলক্ষে দেয়া এক বিবৃবিতে তারা বলেন, ‘কৃত অপরাধের জন্য অং সান সু চি ও তার সেনা অধিনায়কদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’