গত সপ্তাহে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হাউস অব কমন্সের মঞ্চে উঠে কানাডার মাটিতে এক কানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার জন্য ভারত সরকারের এজেন্টদের অভিযুক্ত করেন। কানাডার ওই নাগরিক একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী যাকে ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
এই অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি। এতে ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ককের মধ্যে চিড় ধরেছে।
ট্রুডোর প্রকাশ্যে অভিযোগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংঘাত সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) কানাডিয়ান স্টেশন প্রধানকে অটোয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে উত্তর আমেরিকার দেশটি।
এদিকে এর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। কানাডার এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে ভারত সরকার। পরে কানাডার নাগরিকদের জন্য সমস্ত ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে।
কূটনৈতিক এই অবস্থার মধ্যে- একটি বিষয় খুব তাৎপর্যপূর্ণ যে ভারত ও কানাডা উভয়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমের মিত্র।
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সংঘাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত।
এমন শীতল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে কেউ ভাবতে পারে যে জাস্টিন ট্রুডো বিশ্ব মঞ্চে কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ট্রুডো একা গত এক সপ্তাহ ধরে ভূ-রাজনীতির শীতল বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, কানাডার চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি জনসংখ্যার এবং বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ভারত। তাদের মুখোমুখি হতে গিয়ে জনগণের চোখে ট্রুডো একা হয়ে গেছেন।
উল্লেখ্য- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত ফাইভ আইস ইন্টেলিজেন্স অ্যালায়েন্সের কাছ থেকে নয়াদিল্লির ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে কানাডা।
তবে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে ট্রুডোর মিত্ররা তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, কানাডা যেসব কথা বলছে, তার দেশ তা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছে।
প্রায় একই ভাষা ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া বলেছে, তারা এই অভিযোগ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
এদিকে অটোয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা আশা করছে- দিল্লি এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অটোয়াকে সহযোগিতা করবে।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি উল্লেখ করেছে যে- ভারতের বিশাল কৌশলগত গুরুত্বের তুলনায় কানাডার স্বার্থ বর্তমানে ফিকে।
উইলসন সেন্টারের কানাডা ইনস্টিটিউটের গবেষক জেভিয়ার ডেলগাডো বিবিসিকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সব পশ্চিমা ও ইন্দো-প্যাসিফিক মিত্ররা ভারতকে কেন্দ্র করে একটি কৌশল তৈরি করেছে। এটি চীনের বিরুদ্ধে একটি রক্ষাকবচ ও পাল্টা শক্তি হতে পারে। এটি এমন বিষয় যে ছুঁড়ে ফেলার সামর্থ্যও তাদের নেই।
আরও পড়ুন: কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে কানাডার নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করল ভারত