ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সই করা ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির স্থপতি হিসেবে পরিচিত ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২।
হাসপাতালের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘বাড়িতে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায়’ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে তাকে নয়া দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে ভর্তি করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, 'বাড়িতে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছিল। রাত ৮টা ৬ মিনিটে তাকে মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হয়, কিন্তু ‘সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো যায়নি এবং রাত ৯টা ৫১ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'বয়সজনিত অসুস্থতা' নিয়ে সিংয়ের চিকিৎসা চলছিল।
একজন মৃদুভাষী টেকনোক্র্যাট, মনমোহন সিং ১০ বছরের জন্য ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং দুর্দান্ত ব্যক্তিগত সততার মানুষ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ২০০৪ সালে নিহত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর বিধবা স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী তাকে এই দায়িত্ব পালন করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন।
কিন্তু মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন নিয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত সিং ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর ফলে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে কংগ্রেস পার্টির শোচনীয় পরাজয় হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর সিং সাধারণ জীবনযাপন শুরু করেন।
২০১৪ সালে মনমোহনের স্থলাভিষিক্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে ভারতের অন্যতম 'বিশিষ্ট নেতা' বলে অভিহিত করেন, যিনি নম্র উৎস থেকে উঠে এসেছেন এবং 'বছরের পর বছর ধরে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিতে একটি শক্তিশালী ছাপ রেখে গেছেন'।
সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্টে মোদী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি(মনমোহন সিং) মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।’ তিনি একজন আইনপ্রণেতা হিসাবে সংসদে মনমোহনের হস্তক্ষেপকে ‘অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেছিলেন যে ‘তার প্রজ্ঞা এবং নম্রতা সর্বদা দৃশ্যমান ছিল।’