বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর যথাযথ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা রেস্তোরাঁগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে এই অভিযানকে ‘লোক দেখানো ও হয়রানি’ বলে অভিযোগ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিকরা।
বেইলি রোডের আগুনের পর ধানমন্ডি গুলশান, খিলগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একই রকম অনিরাপদ পরিবেশে ভবনজুড়ে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এদিকে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির অভিযোগ, এসব অভিযানে সমন্বয় নেই। সরকারি সংস্থাগুলো যে যার মতো অভিযান চালাচ্ছে। চলমান এসব অভিযানকে ‘হয়রানি’ ও ‘লোক দেখানো অভিযান’ বলে দাবি করেছেন তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর বিচ্ছিন্ন অভিযান কাম্য নয়। এসব অভিযান তো নিয়মিত পরিচালনা করার কথা ছিল। সমস্যা সমাধানে সমন্বিত অভিযান প্রয়োজন। অন্যথায় এ ধরনের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’
কোনো ভবন ত্রুটিপূর্ণ থাকলে রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টদের দায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওইভাবে ভবনে অভিযান হলে আগে তো রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভবন মালিকের গ্রেপ্তার হওয়ার কথা। ওই অবৈধ ভবন ভাড়া নিয়ে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলা মালিক এরপর আসবে। কিন্তু ভবনে ত্রুটির দায়ে তাদের গ্রেপ্তার না করে একজন রেস্টুরেন্টকর্মীকে গ্রেপ্তার বা আটক করা অন্যায়। কেননা তারা এই প্রক্রিয়ার কোনো অংশই নয়। তাদের বলির পাঁঠা বানিয়ে দায়ীদের বাঁচিয়ে দেওয়ার এটা একটা প্রক্রিয়া।’
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ কেন নয়: হাইকোর্ট
এ বিষয়ে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান ইউএনবিকে বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও আমাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। বর্তমান সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাই। তার কাছে আমরা বিষয়টি জানাতে চাই। উনি যদি মনে করেন আমরা দোষী তাহলে আমরা সব বন্ধ করে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি অবশ্যই আছে। তাই বলে কি সব বন্ধ করে দেওয়া লাগবে? সব সেক্টরের ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, তার মানে তো এই নয় যে, সব বন্ধ করে দেবেন। এসব অভিযান লোক দেখানো। আসল জায়গায় কেউ হাত দেয় না। এই ব্যর্থতার দায় কেউ নেবে না। আমরা মালিক সমিতি হিসেবেও ব্যর্থ হয়েছি।’
অভিযানে কতটি রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হয়েছে জানতে চাইলে মহাসচিব বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকায় ৪০টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটি রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন সংস্থার ১২টি লাইসেন্স থাকার পরও সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে জুলুম করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: ৪ জনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
দেশে কতগুলো রেস্টুরেন্ট আছে এবং কর্মসংস্থান সংখ্যা কত হবে চাইলে তিনি জানান, বর্তমানে দেশে ৪ লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেখানে ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ কোটি মানুষ এ পেশার ওপর নির্ভরশীল।
ইমরান হাসান বলেন, এই ক্ষতি আমরা কীভাবে পোষাব। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে আমরা যে ইমেজ তৈরি করেছি, সেটি নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
হয়রানি না করে টাস্কফোর্স গঠন করে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চালু রাখার ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি সহযোগিতা না করেন, তাহলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
রেস্তোরাঁ সেক্টরে এই প্রথম এত বড় দুর্ঘটনা হয়েছে। তবে এটিই শেষ দুর্ঘটনা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে সবাইকে একটি নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের দায় সরকারকে নিতে হবে: সংসদে চুন্নু ও রেজাউল
এদিকে গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে অননুমোদিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে অভিযান কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা নিয়ে অভিযোগ করেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেন, সরকারের কোন সংস্থা গিয়ে কোন ভবন ভাঙবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, এক ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে দোকান ভাঙেন। আরেকজন গিয়ে বলছেন বন্ধ করেন। এতে করে এলোপাতাড়ি হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে এটা না হয়, তার জন্য দায়িত্বশীলদের সমন্বিতভাবে ধীরস্থিরভাবে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে সমন্বয়হীনতার অভাবে আবারও সমস্যা হবে।
রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা ইউএনবিকে বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করা হবে। চিহ্নিত ভবনের প্রবেশমুখে ঝুঁকিপূর্ণ নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগও বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, রাজউক ভবন নির্মাণে অনুমোদন দিলেও, এরপর সেখানে ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সনদ, কলকারখানা অধিদপ্তরের সনদ নিয়ে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতে হয়। তাই রাজউক চাইলে একা এখানে কিছু করতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মানায় অগ্নিকাণ্ডে এত হতাহত: মেয়র তাপস