মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে আগামী জাতীয় বাজেটে সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের বিশেষ ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সিপিডি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বলেছে, অভ্যন্তরীণ মুদ্রা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবারের মাসিক ব্যয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জীবনযাত্রার খরচ উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে, ‘বর্তমানে ঢাকা শহরে চার সদস্যের একটি পরিবারের মাছ-মাংস ছাড়া মাসিক খাদ্য ব্যয় সাত হাজার ১৩১ টাকা এবং মাছ-মাংসসহ নিয়মিত খাবারের খরচ ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা।’
এ পরিস্থিতি বিবেচনায় শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন মজুরি কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ করে সিপিডি।
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পাঠ করেন সিডিপির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন যে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে যা সরকার কর্তৃক প্রকাশিত গড় মূল্যস্ফীতির তথ্য ব্যবহার করে বোঝা যায় না।
আরও পড়ুন: ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের আস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত করুন: সিপিডি আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে চিনির দাম মার্কিন বাজারের চেয়ে বেশি ছিল। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের তুলনায় দেশে চালের দাম বেশি ছিল, যদিও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং অল্প পরিমাণে চাল আমদানি করে থাকে।’
কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঘাত থেকে অর্থনীতির ধীরগতির পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সিপিডি সরকারকে আগামী বাজেটে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুতর চাপ মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
ড. ফাহমিদা বলেন, এটি দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জোরদার করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যে সঞ্চিত ও অন্তর্নিহিত দুর্বলতা থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
তিনি রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্পের ধীর বাস্তবায়ন, ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম, ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি হ্রাস, বৈদেশিক খাতের ভারসাম্যের অবনতি এবং রাষ্ট্রীয় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদসহ বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি
ফাহমিদা বলেন, রাজস্ব খাত কমে যাওয়ায় নীতিনির্ধারকদের নীতিনির্ধারণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনাকরে প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট আয়ের উপার্জনকারী এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের দিকে মনোনিবেশ করে লক্ষ্যযুক্ত আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। এই জাতীয় ব্যবস্থা আর্থিক ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে থাকা উচিত যা স্থিতিশীলতার দিকে মনোনিবেশ করে, যেমন বাজারভিত্তিক সুদের হার ও বিনিময় হার।
থিংক ট্যাংকটি আরও জোর দিয়েছে যে এই নীতিগুলোর প্রত্যাশিত ফলাফল আনতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা অপরিহার্য। এতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রস্তাবিত সংস্কার পদক্ষেপ এক্ষেত্রে উপকারি প্রমাণিত হতে পারে।
সিপিডি আরও উল্লেখ করেছে যে নির্বাচনী বছরে একটি রাজনৈতিক সরকারের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি অজনপ্রিয় হতে পারে। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় বর্তমান পরিস্থিতির যথাযথ স্বীকৃতি মাথায় রাখা উচিত।
প্রস্তাবে সিপিডি বলেছে, তা করতে ব্যর্থ হলে ম্যাক্রো-ফিসক্যাল পলিসি অবস্থান তৈরি হবে যা সময়ের চাহিদা পূরণ করবে না।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে: সিপিডি