জাতীয় বাজেট
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই বাজেট বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা তা করতে সক্ষম হব। আওয়ামী লীগ তা করতে পারবে।’
রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-চিলাহাটি-ঢাকা রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন 'চিলাহাটি এক্সপ্রেস' এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এই ট্রেনটি সপ্তাহে ছয় দিন উক্ত রুটে চলাচল করবে। আন্তঃনগর ট্রেনটির ধারণ ক্ষমতা ৮০০ জন যাত্রী।
আরও পড়ুন: ঢাকা-চিলাহাটি রুটে আন্তঃনগর ট্রেন 'চিলাহাটি এক্সপ্রেস' উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির শাসনামলে ২০০৬ সালে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তার সরকার গত ১ জুন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে।
বাজেটের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে ও বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে তারা সবসময় সরকার যাই করুক না কেন সেখানে ‘কিন্তু’ (ত্রুটি) খুঁজে বের করে এবং সমালোচনা করে।
তিনি আরও বলেন, তারা জনগণকে হতাশ করতে ও বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কিছু কথা ছড়ায়।
বাজেট উপস্থাপনের পর যারা প্রতিবার পর্যবেক্ষণ করেন যে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, তাদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আমরা এটি করি এবং দেখাই যে তা সম্পন্ন হয়েছে।’
আরও পড়ুন: মার্কিন চাপের মুখে প্রতিবাদী সুর প্রধানমন্ত্রীর
আগামী জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীদের বিশেষ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব সিপিডির
মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে আগামী জাতীয় বাজেটে সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের বিশেষ ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সিপিডি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বলেছে, অভ্যন্তরীণ মুদ্রা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবারের মাসিক ব্যয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জীবনযাত্রার খরচ উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে, ‘বর্তমানে ঢাকা শহরে চার সদস্যের একটি পরিবারের মাছ-মাংস ছাড়া মাসিক খাদ্য ব্যয় সাত হাজার ১৩১ টাকা এবং মাছ-মাংসসহ নিয়মিত খাবারের খরচ ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা।’
এ পরিস্থিতি বিবেচনায় শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন মজুরি কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ করে সিপিডি।
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পাঠ করেন সিডিপির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন যে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে যা সরকার কর্তৃক প্রকাশিত গড় মূল্যস্ফীতির তথ্য ব্যবহার করে বোঝা যায় না।
আরও পড়ুন: ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের আস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত করুন: সিপিডি আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে চিনির দাম মার্কিন বাজারের চেয়ে বেশি ছিল। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের তুলনায় দেশে চালের দাম বেশি ছিল, যদিও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং অল্প পরিমাণে চাল আমদানি করে থাকে।’
কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঘাত থেকে অর্থনীতির ধীরগতির পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সিপিডি সরকারকে আগামী বাজেটে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুতর চাপ মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
ড. ফাহমিদা বলেন, এটি দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জোরদার করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যে সঞ্চিত ও অন্তর্নিহিত দুর্বলতা থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
তিনি রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্পের ধীর বাস্তবায়ন, ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম, ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি হ্রাস, বৈদেশিক খাতের ভারসাম্যের অবনতি এবং রাষ্ট্রীয় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদসহ বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি
ফাহমিদা বলেন, রাজস্ব খাত কমে যাওয়ায় নীতিনির্ধারকদের নীতিনির্ধারণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনাকরে প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট আয়ের উপার্জনকারী এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের দিকে মনোনিবেশ করে লক্ষ্যযুক্ত আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। এই জাতীয় ব্যবস্থা আর্থিক ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে থাকা উচিত যা স্থিতিশীলতার দিকে মনোনিবেশ করে, যেমন বাজারভিত্তিক সুদের হার ও বিনিময় হার।
থিংক ট্যাংকটি আরও জোর দিয়েছে যে এই নীতিগুলোর প্রত্যাশিত ফলাফল আনতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা অপরিহার্য। এতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রস্তাবিত সংস্কার পদক্ষেপ এক্ষেত্রে উপকারি প্রমাণিত হতে পারে।
সিপিডি আরও উল্লেখ করেছে যে নির্বাচনী বছরে একটি রাজনৈতিক সরকারের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি অজনপ্রিয় হতে পারে। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় বর্তমান পরিস্থিতির যথাযথ স্বীকৃতি মাথায় রাখা উচিত।
প্রস্তাবে সিপিডি বলেছে, তা করতে ব্যর্থ হলে ম্যাক্রো-ফিসক্যাল পলিসি অবস্থান তৈরি হবে যা সময়ের চাহিদা পূরণ করবে না।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে: সিপিডি
জাতীয় বাজেটে বৈদেশিক সহায়তা কমেছে: অর্থমন্ত্রী
জাতীয় বাজেটের জন্য বৈদেশিক সহায়তা কমে এসেছে। গত অর্থবছরে (২০২১-২২) ছিল তিন দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা চলতি অর্থবছরে এক দশমিক ০৩ কমে দুই দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।
মঙ্গলবার সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের (নোয়াখালী-২) এক প্রশ্নের জবাবে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
লিখিত উত্তরে মন্ত্রী বলেন, সরকার গত অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রায় তিন দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ সহায়তা পেয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে দুই দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সংসদে শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির তালিকা দিলেন অর্থমন্ত্রী
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহমেদের (ময়মনসিংহ-১১) প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সংশোধন করা হতে পারে।
মামুনুর রশীদ কিরনের (নোয়াখালী-৩) প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা কামাল বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাজ করছে।
তিনি বলেন, এনবিআর আশা করছে অর্থবছরের শেষ নাগাদ লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল অংশীদার: অর্থমন্ত্রী
পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, যারা পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনবে তাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না, আইন করে তাদের সেই সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে তার পদক্ষেপের পক্ষে তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ সিস্টেমের কারণে এই জাতীয় বেশিরভাগ অর্থ অঘোষিত ও পাচার হয়ে গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশ অর্থ পাচারকারীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন: বাজেট অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে: অর্থমন্ত্রী
সদ্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ঘোষিত একটি বিধান অনুযায়ী, আয়কর কর্তৃপক্ষসহ কোনো কর্তৃপক্ষ বিদেশে অবস্থিত কোনো সম্পদের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না যদি কোনো করদাতা এই ধরনের সম্পদের ওপর কর দেন।
বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১৫ শতাংশ, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশে পাঠানো নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেন মন্ত্রী।
এই সুযোগটি ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার কিছু হাতিয়ার ব্যবহার করবে যাতে মানুষ পাচার হওয়া অবৈধ টাকা ফেরত আনতে উৎসাহিত হবে। তবে যারা যারা নিয়মিত কর প্রদান করে এটি তাদের নিরুৎসাহিত করবে না।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: সম্পূর্ণ অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা করেছেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রীর দাবি, প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সমাজের সকল অংশের জন্য বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ‘আমি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি এবং দারিদ্র্য থেকে বেড়ে উঠেছি। তাই, আমি দরিদ্রদের কষ্ট অনুভব করি।’
তিনি বলেন, নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা-বেষ্টনী কর্মসূচির জন্য বরাদ্দসহ অনেক ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ দুর্নীতি ও ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে আয় করা হলেও নতুন বিধানের পর এ ধরনের বেশির ভাগ অর্থই ফেরত আসবে।
তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাজারে চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সংকোচনের নীতি অনুসরণ করা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা পণ্য ও পণ্যের দামের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সে কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: রেমিটেন্সের সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি শিগগিরই ফিরবে, প্রত্যাশা অর্থমন্ত্রীর
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে যার প্রভাব স্থানীয় বাজারে পড়েছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময় এবং সরকার তার অভিজ্ঞতা থেকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।
তিনি বলেন, রেমিটেন্স প্রেরকদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কারণে বৈদেশিক রেমিটেন্স ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে এবং ৫০ বিলিয়ন বেঞ্চমার্ক অতিক্রম করবে।
তবে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকরা কী পরিমাণ রেমিটেন্স বাইরে চলে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি বিরত থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এএসএম শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: মূল্যস্ফীতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী
বাজেট অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত করবে।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আশা করি এই বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত হবে।’
অর্থমন্ত্রী করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উন্মোচন করেছেন।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: সম্পূর্ণ অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা করেছেন অর্থমন্ত্রী
জাতীয় বাজেট উপস্থাপন ৯ জুন: মুস্তফা কামাল
আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরপর দুই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, কর বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন, ‘জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করে সর্বনিম্ন আয়কর নির্ধারণ করা হবে। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় বিবেচনা করে আমরা ন্যূনতম কর নির্ধারণের চেষ্টা করব।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের কোনো পরিকল্পনা নেই।
তিনি উল্লেখ করেন, আমদানি-রপ্তানি দুটোই বেড়েছে। তবে সব সময়ই রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হয়। আমাদের দেশে রপ্তানি আমদানিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘কিছু আমদানি সরাসরি প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত যা আমাদের অনুমতি দিতে হবে। কিছু আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ সেগুলো সব সময় খোলা থাকে না।’
মন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা বিদ্যমান থাকায় এসব বিলাসবহুল সামগ্রী নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
পড়ুন: বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হবে: অর্থমন্ত্রী
বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তিতে নিরাপদ অবস্থানে বাংলাদেশ: অর্থমন্ত্রী
কোভিড-১৯: প্রতি মাসে ২৫ লাখ লোককে টিকা দেবে সরকার
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে পর্যায়ক্রমে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সরকার প্রতি মাসে ২৫ লাখ লোককে টিকা দেবে।
বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের সময় তিনি এই ঘোষণা দেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে ৮০ শতাংশ লোককে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা দেয়া হবে এবং প্রতি মাসে ২৫ লাখ টিকা দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী
সরকার সবার জন্য বিনামূল্যে টিকা দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রসঙ্গে কামাল বলেন, ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয় ডোজ সংগ্রহের জন্য যা ব্যয় হবে সেই তহবিল বরাদ্দ করব। বাজেটে এই লক্ষ্যে আমরা পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখব।
তিনি বলেন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) এবং কমিউনিকেশন ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কামাল বলেন, কোভিড-১৯ থেকে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য ইপিআইয়ের আওতায় জাতীয় স্থাপনা ও টিকাদান পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়ার সরকার, আমেরিকা থেকে ফাইজার কোম্পানি, ফ্রান্স থেকে সানোফি এবং বেলজিয়াম থেকে জিএসকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। চীন থেকে সিনোফার্ম ভ্যাকসিন এবং রাশিয়া থেকে স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রয়োজনে বাংলাদেশেই এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হবে।
এদিকে, অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে পৌঁছেছে। ভারত ও চীন সরকার উপহার হিসাবে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের যথাক্রমে ৩২ লাখ ডোজ এবং ৫ লাখ ডোজ দিয়েছে বাংলাদেশকে।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পেতে তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং টিকা প্রদান কার্যক্রম সহায়তার জন্য ১৪.৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য এডিবি'র সাথে ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি, ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক এবং এআইআইবির কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সাহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজেট: স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ
মানব স্বাস্থ্যের ওপর করোনাভাইরাস মহামারির তাণ্ডবের কারণে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন যা গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বেশি।
বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের সময় মন্ত্রী এই প্রস্তাবটি করেন।
নতুন এই বরাদ্দের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাত এই প্রথমবারের জন্য মোট বাজেটের সাত শতাংশেরও বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে এই খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫ শতাংশ এবং গত সাত অর্থবছরে জিডিপির এক শতাংশেরও কম।
আরও পড়ুন: বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী
সরকার যেহেতু জীবন ও জীবিকা রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে তাই স্বাস্থ্যখাতের জন্য এবার মোট বাজেটের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৩ শতাংশ বরাদ্দ করেছে।
বাজেট ঘোষণার সময় মন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরকার গৃহীত কর্মসূচি এবং পদক্ষেপগুলোকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়ে আমি এই অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতের জন্য ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছি, যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা ছিল।’
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
তিনি বলেন, গত বছরের মতো কোভিড-১৯ মহামারিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলায়, জীবন ও জীবিকা রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাবকে দৃঢ়ভাবে কাটিয়ে উঠার স্বার্থে গতানুগতিক বাজেট থেকে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে।
পরের বছরের বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন করেছেন বলে উল্লেখ করেন কামাল।
আরও পড়ুন: ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আজ
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং পরবর্তী বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দও রাখা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এই মহামারি চলাকালীন সময়ে তারা জনস্বাস্থ্য ও মানুষের জীবন রক্ষার জন্য কৌশল অবলম্বন অব্যাহত রাখবে।
তিনি আরও বলেন, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে তারা সর্বোচ্চ জোর দেবেন।
কোভিড-১৯: জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় যা যা প্রয়োজন তা করা হবে উল্লেখ করে, এ মহামারি থেকে সৃষ্ট সংকটে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।