বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের ওপর অনেকটা ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে উল্লেখ করে সংগঠনটি বলছে, প্রশাসনের দায়সারা তদারকির কারণেই ব্যবসায়ীরা বারবার বিনা কারণে খাদ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো ক্যাব চট্টগ্রামের বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহের কথা বলা হলেও বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে এসবের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় খাদ্য বিভাগের আওতায় বাজারে ওএমএস চালু, টিসিবির মাধ্যমে খাদ্যপণ্য বিক্রয় বাড়ানো এবং প্রশাসনের সমন্বিত বাজার তদারকি জোরদারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, ‘ইতোপূর্বে চাল, ডাল, পেয়াঁজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ওই খাতের ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নিয়ে পরামর্শ সভার আযোজন করে করণীয় নির্ধারণ করত। কিন্তু এখন সে ধারা চলমান নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রশাসন দায়সারা কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেই ক্ষ্যান্ত এবং সরকারকে অবহিত করছে যে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চালের মূল্য বাড়লে খাদ্য বিভাগ খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস), টিসিবি ডিলার ও ট্রাক সেলের মাধ্যমে খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের বিক্রি জোরদার করে থাকে। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই এসব কর্মকাণ্ড অনেকটাই স্থবির। ফলে সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষ একদিকে কর্মহীন ও আয়-রোজগার হারিয়ে দিশেহারা, আর অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
গত এক মাস ধরে খুচরা বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম অয়েল), পেঁয়াজ, আলু, আটা, ময়দা, চিনি, ডিম, আদা, জিরা, হলুদ, এলাচ, দারুচিনি, মুরগির মাংস (দেশি ও ব্রয়লার), খাসির মাংস ও শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়োদুধ বাড়তি দামে বিক্রির পাশাপাশি সব ধরনের শাকসবজির দামও চড়া বলে উল্লেখ করা হয় ক্যাবের বিবৃতিতে।
ক্যাবের অভিযোগ, চালের মূল্য নিয়ে কারসাজি করলে বা অন্য যেকোনো পণ্যের দাম নিয়ে অনিয়ম করলে এর সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল বাজারে তার কোনো প্রয়োগ নেই।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার পর্যবেক্ষণ করে ক্যাব জানায়, স্বর্ণজাতের চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা প্রতি কেজি। যা এক মাস আগে ছিল ৪৪-৪৫ টাকা। পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫৪ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৪৪-৫১ টাকা। মিনিকেট ও নাজিরশাইল মান ভেদে বিক্রি হয়েছে ৫৪-৬৪ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা। এছাড়া একটু ভালো মানের নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬২ টাকা।
এক মাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি প্যাকেটজাত আটায় দাম ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৮ টাকায়। প্যাকেটজাত ময়দায় কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৮ টাকায়।
বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ১০৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮২-৮৬ টাকায়। লিটারে ৫ টাকা বেড়ে পাম অয়েল (খোলা) বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৩ টাকায়।
পেঁয়াজ (আমদানি) বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি, যা এক মাস আগে ছিল ২৫-৩০ টাকা। চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৫৫ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৬ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৩০-৩৪ টাকা। হলুদ মাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৭০-২২০ টাকা কেজি।
কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকায়। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি জিরা সর্বোচ্চ ৪০ টাকা বেড়ে মান ভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৪০-৪১০ টাকায়। প্রতি কেজি মুগডাল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১১০-১৩০ টাকায়। আর মসুরের ডালের দাম কমলেও, এখনও ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মাসের ব্যবধানে দারুচিনি, এলাচ, ফার্মের ডিম, দেশি মুরগি, ব্রয়লার মুরগি, খাসির মাংসসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বলে দাবি ক্যাবের।