দেশে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এমন অবস্থায় লকডাউন সমাধান নয়, বরং করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরির তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, মহামারি প্রতিরোধে লকডাউন কোন সমাধান নয়, বরং এতে নিম্ন আয়ের মানুষদের দুর্ভোগ বাড়ে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি।
বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমানে দেশের রপ্তানি শিল্পে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। আবারও লকডাউনের সিদ্ধান্ত আসলে শিল্পখাতের ঘুরে দাঁড়ানো ব্যাহত হবে, যা অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তিনি বলেন, যেসব দেশ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসব দেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। তাই লকডাউন না দিয়ে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলাই এই মহামারি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় বলে মন্তব্য করেন জসিম উদ্দিন।
আরও পড়ুন: দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে স্পেন-এফবিসিসিআই এর আগ্রহ প্রকাশ
এসময় দোকান মালিক ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের টিকা গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এতদিন বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব। কিন্তু এখন পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল এবং একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে দেশে বিনিয়োগ বান্ধব অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।
এসময় ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে আরও বেশি ঋণ দেয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখার বিধান করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলদেশ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা জরুরি।
বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই হয় ছয়টি ব্লকের মধ্যে। তাই রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি), ইউরোপীয় ইকোনমিক ইউনিয়ন, ইউএসএ, ইইউ, ইউকে ও আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট -এই ছয়টি ব্লকের সঙ্গে এফটিএ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। এলডিসি উত্তর সময়ে দরকষাকষির জন্য বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।
আরও পড়ুন: এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন বন্ধে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে এফবিসিসিআই ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এফবিসিসিআই’র নিজস্ব গবেষণা সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন খাতের ১৮ জন বিশেষজ্ঞকে প্যানেল উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের বিশ্লেষণ ও মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআই আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ, গ্লোবাল মার্কেট অ্যাক্সেস ২০২১-২০২৬, টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ ব্যবস্থা ও টেকসই রপ্তানি উন্নয়ন, ভর্তুকি ও প্রণোদনা শীর্ষক চারটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান জসিম উদ্দিন।
সরকারের বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বেসরকারি খাতের। কিন্তু এসব নীতি প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে আলোচনা করা হয়না। তাই বাস্তবায়নের সময় ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তাদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়। তাই নীতি প্রণয়নের আগে খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করার ও নীতির প্রভাব মূল্যায়নের আহ্বান জানান তিনি।
এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি।