তবে আমি তাকে নিয়ে অন্যের কাছে বলতে গেলে যা বলব তা হলো তার কাছ থেকে আমি যা পেয়েছি। তার প্রয়াণে নিজেকে এই বলে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে, তার সাথে আমার জানাশোনার ৫৫ বছর সময় জুড়ে তিনি আমার জন্য আশির্বাদ হয়ে ছিলেন। যা ছিল এ জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি। এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু হওয়ার সময়ে আনিসুজ্জামান এবং মুনীর চৌধুরীর মতো মানুষের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমার বাবার অ্যাপার্টমেন্টে কাটানো দিনগুলো। পিতৃস্নেহে তিনি আমাকে বছরের পর বছর এবং ১৯৯২ সালে আমার বাবার মৃত্যুর ব্যথা ভুলে থাকার এ দীর্ঘ পথে সহায়তা করেছেন। আমার বাবার অবসর নেয়া এবং তার চলে যাওয়ার পরে ফুলার রোডের আমাদের পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টে তিনি চলে এসেছিলেন বলে ওই ক্ষতটা কিছুটা লাঘব হয়েছে।
ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার সময়ে তিনি আমার ভালোবাসা এবং অনুপ্রেরণার এক ধ্রুবক হিসেবে পাশে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ওপর আমার লেখা বইয়ের ভূমিকা লেখার জন্য যখন তিনি রাজি হয়েছিলেন, তখন এটি ছিল আমার জন্য সর্বোচ্চ সম্মানের বিষয়। তার সে অলৌকিক মহিমা এখনও তাকে বাকি সবকিছু থেকে অনন্য হিসেবে তুলে ধরেছে। পাঁচ দশক ধরে তার অস্পর্শনীয় বিশিষ্টতা অমলীন রয়েছে। তিনি যখন আমার বাসায় নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন, তখনও আমি তাকে দেখে বিস্মিত হয়েছি। এবং তার স্নেহের সমুদ্রে সাঁতরে বেড়িয়েছি। আমরা রবী ঠাকুরের নটীর পূজা নিয়ে সম্ভাব্য একটি বই লেখার কথা বলেছিলাম, যেখানে তিনি তার লেখনীর অতুলনীয় অবদান রাখবেন বলেছিলেন। এখন শুধু আফসোস, সেটা আর হয়ে উঠলো না…
তিনি যা কিছু রেখে গেছেন, তা হলো সেসব স্মৃতি, সেসব মুহূর্ত, যা ক্ষণিকের চেয়েও অনেক শক্তিশালী, কারণ আমার মনে তার সদা হাস্যোজ্বল মুখটি ভেসে উঠছে। আজ, সে স্মৃতিগুলো যেন কোনো সমুদ্রের সমান হয়ে রয়ে গেছে। এমনকি তিনি জাতির বিবেক হয়েও সবকিছু সহজেই তার কাঁধে নিয়েছেন।
লেখক: এনায়েতুল্লাহ খান, এডিটর-ইন-চিফ, ইউএনবি এবং ঢাকা কুরিয়ার (এ নিবন্ধটি ঢাকা কুরিয়ারে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল)।