এর আগে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ ময়দানে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। শেষবারের মতো তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দুরদুরান্ত হতে মানুষ ছুটে আসেন।
শুক্রবার বাদ জুমা দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজ ময়দানে একটি হিমবাহী গাড়িতে করে ময়েজ মঞ্জিল হতে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের লাশ আনা হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটে করোনায় বিএনপি নেতার মৃত্যু
বেলা ৩টার দিকে শহরের চকবাজার জামে মসজিদের খতিব ও সামমুল উলুম মাদরাসার প্রধান মুফতি মাওলানা কামরুজ্জামানের ইমামতিতে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রিয় নেতার দাফন কাজে অংশ নিতে আগত জনতার ঢল রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকা ছড়িয়ে পড়ে।
জানাজাপূর্ব সেখানে পরিবারের পক্ষ হতে মরহুমের বড় মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইবনে ইউসুফ, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, শরিয়তপুরের বাহাদুরপুর দরবার শরীফের প্রতিনিধি হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হানজেলা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি একে আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
বক্তারা জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, তিনি ছিলেন প্রকৃতই একজন সজ্জন চরিত্রের জননেতা। তার প্রতিপক্ষ বা রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধেও তিনি কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করতেন না। তিনি পাঁচবার ফরিদপুর সদর আসন হতে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। বিএনপি যতোবার সরকার গঠন করেছে ততোবারই তিনি মন্ত্রী হয়েছেন।
আরও পড়ুন: রামেক হাসপাতালের প্রিজন সেলে বিএনপি নেতার মৃত্যু
জানাজার পর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ হতে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, এছাড়াও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে মোদাররেস আলী ঈসা, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ মাসুদ হোসেন, কোতয়ালী থানা বিএনপি, শহর বিএনপি, রাজবাড়ি ও মাদারিপুর জেলা বিএনপি, জেলা যুবদল, মহানগর যুবদল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, জেলা তাতী দল, জেলা ছাত্রদল, মহানগর ছাত্রদল, ফরিদপুর প্রেসক্লাব, চকবাজার বণিক সমিতিসত বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ হতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
জানাজা শেষে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজ ময়দান হতে তার লাশ ময়েজ মঞ্জিলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাকে তার পিতা চৌধুরী ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়ার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর নিউমোনিয়া জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর এক সপ্তাহ সিসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে পাঁচবারের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি যে কয়বার সরকার গঠন করেছেন ততবারই তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত বিএনপি নেতার মৃত্যু
১৯৪০ সালের ২৩ মে তিনি ফরিদপুর জেলার সম্ভ্রান্ত বাঙালি জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষ ফরিদপুরের জনমানুষের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে জনসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যকে ধারণ করে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফও একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবীদ হিসেবে আমৃত্যু মানুষের পাশে থেকেছেন। তার বিদায় বেলায় হাজার হাজার মানুষ তার এই অবদানের প্রতি শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন।