বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি শুরু থেকেই সংস্কারের পক্ষে। দুর্ভাগ্যজনক, কেউ কেউ বলছে বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। এই কথাটা সঠিক না। আমরা বার বার বলছি- একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন তা বিএনপি চায়।’
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন একটি প্রধান ফটক। আমরা সব সময় গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে। তার জন্য আমরা কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও করব। একইসঙ্গে আমরা মনে করি জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু চাপিয়ে করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যাটা হলো, এ দেশে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চাই হয়নি। এ সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি।’
‘বাংলাদেশ একটা অত্যন্ত জটিল রাজনৈতিক সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আজকে যে প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে- ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন। জাতিগতভাবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজকে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। খুব ভালো হতো, যদি আমরা প্রথম থেকেই এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে সামনে এগুতে পারতাম।’
আরও পড়ুন: সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চান মির্জা ফখরুল
বক্তব্যের একপর্যায়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘খুব জরুরি কথা, আমরা যেন একাত্তরকে কখনও ভুলে না যাই। একাত্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিক যে লড়াই-সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের প্রত্যেককে আমাদের মনে রাখা দরকার। সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে, ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।’
সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান ড. আলী রিয়াজের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রিয়াজ বলেছেন তার কাছে এক লাখের বেশি প্রস্তাব এসেছে। শুনেছি, এ প্রস্তাবগুলো তৈরি করে তারা সরকারের হাতে তুলে দেবেন, সরকার তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে।
‘উনারাই (রিয়াজরা) যদি প্রথমে পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে বসতেন, সেটা আরও ভালো হতো। আমার কাছে মনে হয়। তারা গভর্মেন্টের সঙ্গে বসবেন, আরও আলোচনা হবে। আমার কাছে মনে হয়, যত সময় বাড়বে, তত আমাদের সমস্যা বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আসল প্রবলেম তো অন্য জায়গায়। এগুলো বাস্তবায়ন করবেন কাদের দিয়ে? প্রশাসন, গভর্মেন্ট মেশিনারি, এগুলো তো এখনও ফ্যাসিবাদের মধ্যে আছে। এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। একটা ফাইলও নড়ে না। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ফাইল কোথায় আটকে আছে দেখবেন? ওখানেই আটকে আছে। এই বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়তে হবে।’
মাইন্ডসেট একটা বড় জিনিস এমন মন্তব্য করে তিনি ড. মোহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, উনি একটা বক্তব্য দিয়েছেন খুব ভালো লেগেছে যে একটা বন্দোবস্ত তো ছিল, টাকা দেবো কাজ করিয়ে নেবো। ভালো সমস্যা নেই। এখন তো আপনি অন্য সিস্টেমে যাচ্ছেন। সেই মাইন্ড সেটটা তো তৈরি করতে হবে। ওই মাইন্ড সেটের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। ভুল-ত্রুটি হবে কিন্তু ওর মধ্য দিয়েই ডেমোক্রেটিক সিস্টেমকে এগিয়ে নিতে হবে। সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।’