বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্রুত সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা এখন সময়ের দাবি।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের মধ্য দিয়ে ১৬ বছরের সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়েছে। তবে আরেকটি আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতন্ত্রকে এমনভাবে পুনরুদ্ধার করতে হবে যাতে তা জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা না যায়।
সত্যিকারের গণতন্ত্র ও জনগণের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি নির্বাচিত সরকার ও নির্বাচিত শাসন প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।
আরও পড়ুন: জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকবে না: বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার যত বেশি সময় নেবে, তত বেশি নতুন সংগঠন গড়ে উঠবে এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করে অনেক ব্যক্তি বিভিন্ন প্রস্তাব ও আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরবে।
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল যদি দাবি করে এটা জনগণের আকাঙ্ক্ষা, তাহলেও জনগণের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর হবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জনগণের আস্থা নিয়ে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক সরকারকে অবশ্যই জনগণের সম্মতি ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং সংবিধান সংশোধন করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
সপ্তম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ভাসানীর জীবনী পুনঃঅন্তর্ভুক্তির দাবিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী অনুশীলন পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, মানুষের কাছে তাদের অনুভূতি, স্বার্থ এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা রয়েছে এবং এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া অরাজনীতিক।
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আমরা সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম যাতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণ তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে, বিগত সরকার সিস্টেমটি সরিয়ে তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল।’
তিনি বলেন, গণভোটের বিধানটি সংবিধানে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে জনগণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধু গুটিকয়েক জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তির মতামতের ওপর নির্ভর করাই যথেষ্ট হবে না।
মওলানা ভাসানীর ভূমিকার কথা স্মরণ করে নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এই মহান নেতার নাম ও অপরিসীম অবদানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।
তিনি বলেন, ‘এর জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) ইতোমধ্যে শাস্তি পেয়েছে। তারা শুধু পরাজিতই হয়নি, পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এমন নজির নেই। এর আগে অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা এবং কেউ কেউ কারাবরণ করলেও কাউকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়নি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগকে কেন এত বড় অপমান সহ্য করতে হয়েছে তার অনেক কারণ আছে। ‘তার মধ্যে একটি হলো, তারা দেশের অনেক মহান সন্তানদের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। তারা শুধু একটি দল নয়, একটি পরিবারকে প্রাধান্য দিয়েছে, যা একটি রাজনৈতিক অপরাধ। তারা তাদের শাস্তি পেয়েছে। আমি মনে করি, এটা শুধু তাদের জন্য নয়, আমাদের সব রাজনীতিবিদের জন্যই একটা শিক্ষা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ইতিহাসে প্রত্যেকের স্থান এবং তাদের অর্জন ও অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে। অন্যথায় ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।
আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্র চলছে, শিগগিরই নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন: বিএনপি