নির্বাচিত সরকার
সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে কেউ হটাতে পারবে না: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটানোর ক্ষমতা কারো নেই।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আবারও কালো পতাকা মিছিলের নামে সন্ত্রাস ও সহিংসতার সুর তুলছে। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার ক্ষমতা কারো নেই।’
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচনে না এসে বিএনপি যে ভুল করেছে তার খেসারত দিতে হবে।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা একটি চ্যালেঞ্জ: ওবায়দুল কাদের
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান ও জাতীয় সংসদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামীকাল থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে জনগণ বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে, যা দেশে গণতন্ত্রের নতুন বিজয়।’ বিপুল সমর্থনের জন্য জনগণকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ রাজপথে রাজনৈতিক ইস্যু মোকাবিলা করবে। আর দেশের স্বার্থে কোনো অশুভ শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করে এবং মিথ্যা তথ্য প্রচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের অপচেষ্টা সফল হয়নি।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর নাম দেশে-বিদেশে শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছে তারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও আলবদর শক্তির দল।
আরও পড়ুন: স্বতন্ত্র এমপিরা সংসদে স্বতন্ত্র হিসেবেই ভূমিকা রাখবেন: কাদের
তিনি বলেন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের জন্য মঈন খানের উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এখন সরকারের অগ্রাধিকার হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, ‘মৌখিকভাবে হুমকি দেওয়া সবসময় সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে না। আমাদের ইতিবাচক পদক্ষেপে যেতে হবে। এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ইতিবাচক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রোকেয়া সুলতানা, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে: কাদের
এই সরকার জনগণের: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার।
তিনি বলেন, ‘এটি জনগণের সরকার। এটি বাংলাদেশের জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার। ভারত-রাশিয়া-চীন, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন-যুক্তরাজ্যসহ কূটনৈতিক সম্পর্কের সব দেশের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক।’
রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চীন ও নেপালের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের বাংলাদেশ সমন্বয়কের তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাক্ষাৎকালে চীন ও নেপাল উভয় দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের নিজ নিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দনপত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাতে তুলে দেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। চীন থেকে আমরা বেশি আমদানি করি, কম রপ্তানি করি। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির আলোচনায় চীন বাংলাদেশ থেকে পাট, চামড়া, মাংস, সি-ফুড, মাছ ও আম আমদানিতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। জুলাই বা আগস্ট মাসে আমরা আম রপ্তানি শুরু করতে পারি। চীন একটি বড় বাজার। সেখানে আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছি।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারে স্থানীয়রাই সংখ্যালঘু, রোহিঙ্গা বেশি। নিরাপত্তা, মাদকসহ নানা সমস্যা সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকারসহ নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। চীন এ বিষয়ে কাজ করছে এবং প্রত্যাবাসন যাতে শুরু হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে একমত হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বৈরি পরিবেশ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, চীন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সুবিধাজনক সময়ে সেটি হওয়ার জন্য আলোচনা চলছে।
জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর গুয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ড. হাছান জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব তার চিঠিতে ও আমার সঙ্গে কাম্পালায় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনকে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং বিশ্বনেতাদের কাছেও তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। কিন্তু এর সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল যে বিবৃতি দেয়, মাঝেমাঝে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এটি নিয়ে আমি তার সঙ্গে আলোচনা করেছি।
আরও পড়ুন: পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয় দ্বিগুণ করতে চাই: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'পক্ষপাতদুষ্ট ও ভুল উৎস থেকে তারা যে সংবাদ পায়, সেটি যেন না হয়। তারা যাতে ভেরিফায়েড সোর্স থেকে তথ্য পায় এবং আগুনসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ঘুমন্ত মানুষকে দগ্ধ করা, ২৮ অক্টোবরের ঘটনাপ্রবাহ সেগুলো যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের রিপোর্টে আসেনি সেটি আমি তাকে জানিয়েছি। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর বলেছেন বিষয়টি তিনি দেখছেন।'
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর সেদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তুর্জাতিক সহায়তাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমি বলেছি, রোহিঙ্গা ইস্যু যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্পটলাইটে থাকে। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর বলেছেন, এটি নিয়ে জেনেভায় আন্তুর্জাতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে এবং এ নিয়ে বৈঠক আসন্ন।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারীর সঙ্গে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, যাতায়াত বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের উত্তরের সীমান্ত থেকে নেপাল মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে। ১ লাখ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতার সম্ভাবনার দেশ নেপালের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি হয়েছে, এর ট্যারিফ নিয়ে আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন: বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ স্থান: ব্রিটিশ এমপিদের প্রধানমন্ত্রী