বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত সবাই তাদের কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশে জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করতে চাই। রাজনৈতিক দল হিসেবে এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মন্ত্রী, এমপিসহ সকল স্তরের সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ফরিদপুরে এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
একই সঙ্গে সরকারি-আধা-সরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের সবাইকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এটি এমন কিছু নয় যা রাতারাতি অর্জন করা যায়, তবে এটি সম্ভব ... পরিবারের কথা চিন্তা করলে জবাবদিহিতার কারণে তা বিকশিত হয়।’
ফরিদপুর সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির উদ্যোগে '৩১ দফা রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার প্রস্তাব ও জনসম্পৃক্ততা' শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন: জনগণকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান তারেক রহমানের
তারেক বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে জবাবদিহিতার সম্পূর্ণ অভাবের কারণে দুর্নীতি, নৈরাজ্য, আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ অন্যান্য অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার একতরফা নির্বাচন আয়োজন করেছে, যেখানে দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক লুটপাট ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারে লিপ্ত হয়েছে। এটি হয়েছে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার অভাবে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘তাই আমাদের লক্ষ্য দুর্নীতি দূর করতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতকে শক্তিশালী করা, যাতে জনগণ সঠিক চিকিৎসা পেতে পারে। আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা হলে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা, জনগণের হারানো অধিকার পুনরুদ্ধার এবং ধীরে ধীরে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে বিএনপির ৩১ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অপরিহার্য। ‘বিএনপির মতো দল সুষ্ঠু নির্বাচনের ডাক দেবে এটাই স্বাভাবিক। এটা করতে হলে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।’
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করতে কীভাবে সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তা স্মরণ করেন বিএনপি নেতা। ‘একইভাবে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তিনি বলেন, 'আমরা যদি আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, তাহলে সকল নেতাকর্মীর সহযোগিতা প্রয়োজন। এই সহযোগিতার প্রথম শর্ত হচ্ছে জনগণের আস্থা ধরে রাখা। সেটা করতে হলে আমাদের অবশ্যই জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, কথা বলতে হবে এবং আচরণ করতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা স্বীকার করেন যে, দলের কিছু নেতাকর্মী ভুল করতে পারেন এবং তা অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। ‘আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের সতর্ক করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তারেক বলেন, জনগণের আস্থা যেকোনো রাজনৈতিক দল, তার নেতা ও নেতাকর্মীদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। ‘জনগণের আস্থা হারালে আমরা সব হারাব। তাই আসুন আমরা তা সংরক্ষণের অঙ্গীকার করি। আমরা যদি ঘরে বসে বসে ভাবি যে, জনগণ ইতোমধ্যে বিএনপির ওপর আস্থা রেখেছে, তাহলে সেই আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে।’
নিজেকে সংশোধন করুন
জনগণের আস্থা ধরে রাখতে এবং চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সবার আগে নিজেদের সংশোধন করতে দলীয় সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘আগে নিজেকে সংশোধন করুন, তারপর অন্যকে সংশোধন করতে বলুন। অন্যথায় বড় বড় কথা বলে লাভ নেই (অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি বন্ধ করার বিষয়ে)।
দুই নেতা দলের নেতাদের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির বিষয়ে তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন তোলেন, দলের কোনো নেতাকর্মী দলের প্রভাব খাটিয়ে অমানবিক, সমাজবিরোধী ও চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো অপকর্মে লিপ্ত হলে বিএনপি কমিশন গঠন বা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবে কি না।
এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে কেউ যদি এমন অনৈতিক কাজ করে থাকে, তাহলে আগে নিজেকে সংশোধন করুন। আমাদের দলে কিছু খারাপ লোক থাকতে পারে, যারা খারাপ ও অনৈতিক কাজ করছে। আমরা ইতোমধ্যে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন হবে যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে কঠিন: তারেক রহমান
তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেলেই তার দল সর্বাত্মক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এমনকি বিএনপির যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা চরম ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলেও জানান বিএনপি নেতা। ‘মূল কথা হলো ‘প্রথমে নিজেকে সংশোধন করা এবং তারপরে অন্যদেরও এটি করতে উৎসাহিত করা।’
বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তারেক।
তিনি বলেন, তাদের দল দ্রুত বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চায়, যাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো যথাযথভাবে সমাধান করা যায়।