বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফর থেকে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ‘দৃশ্যমান অর্জন’ নেই।
তিনি বলেন, ‘এই সফরে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যে অর্জন আমরা দেখতে পাচ্ছি তা হলো কুশিয়ারা নদী থেকে ৫৩ কিউসেক পানি। আমরা আর কোনো দৃশ্যমান অর্জন দেখিনি।’
ভারতের কাছ থেকে সামরিক যান কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ‘যেদিন এই কথা বলা হয়েছিল, সে দিনেই দিনাজপুর সীমান্তে একজন নিহত হয়েছিল এবং আরও দুইজন নিখোঁজ ছিল। এটিই (তার সফরের) ফলাফল।’
আরও পড়ুন: আন্দোলন বানচাল করতেই বিরোধীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন: বিএনপি
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এদিকে ভারতে চার দিনের সরকারি সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার সফরকালে, হাসিনা তার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছেন এবং মঙ্গলবার ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও ভারতীয় উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন।
দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর, ঢাকা ও দিল্লি কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সহযোগিতার সাতটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
ফখরুল বলেন, সফরে কোনো ফলাফল না আসলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভারতের প্রতি তাদের ভালোবাসা তুলে ধরছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আপনার অবশ্যই মনে আছে যে এই সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী (এ কে আব্দুল মোমেন) বলেছিলেন যেকোনো উপায়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ভারতীয় নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন।’
আরও পড়ুন: পাকুন্দিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দল বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে এবং বিশ্বব্যাপী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল গণতান্ত্রিক দেশ তাদের ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের ভালো বন্ধু এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশ। আমরা বিশ্বাস করি যে ভারতও তার গণতান্ত্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখবে।’
সরকার কর্তৃক সন্ত্রাসের রাজত্ব উন্মোচন
সারাদেশে তাদের দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা এবং তাদের নেতাকর্মীদের ‘মিথ্যা’ ও ‘কাল্পনিক’ মামলায় ফাঁসানোর জন্য ফখরুল সরকারের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অতীতের মতো আমাদের বিরুদ্ধেও কাল্পনিক মামলা করা হচ্ছে। আপনারা জানেন যে ইতিমধ্যে আমাদের তিন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কিশোরগঞ্জ শাখার ১৪ বছর বয়সী গুলিবিদ্ধ নেতা শ্রাবণকে দেখতে বৃহস্পতিবার পপুলার হাসপাতালে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ছেলেটির ফুসফুস, লিভার ও কিডনি গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘সে রক্ত বমি করছে... তার জীবন বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা।’
তিনি আরও জানান, শ্রাবণ ছাড়াও বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন এবং অনেকে বিভিন্নভাবে আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। ‘তারা (সরকার) আবারও সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব জারি করেছে। আমি বলতে চাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়ে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’
সহিংসতার আশ্রয় না নিলে বিএনপির কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হবে না বলে আইনমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়... ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে। গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। জনগণের শক্তি দিয়ে আমরা তাদের পরাজিত করব।’
আরও পড়ুন: যুবদল কর্মী হত্যা: পুলিশ সুপারকে আসামি করে বিএনপির মামলার আবেদন