কুশিয়ারা
‘কুশিয়ারার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক জনপদ’
সিলেটের বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা নদী গিলে খাচ্ছে মাইলের পর মাইল জনপদ। ইতোমধ্যে নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে রাস্তা, বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর কবরস্তান। নদী তীর রক্ষা বাঁধও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী তীরবর্তী অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, কুশিয়ারায় ভাঙন দেখা দিলেও তা রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
ভাঙন কবলিত উপজেলার আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাঙনস্থলে কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।আরও পড়ুন: কুশিয়ারা নদীতে ধরা পড়ল ১৬০ কেজি ওজনের বাগাড়
কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার রাজু আলম বলেন, আমরা এই এলাকায় নদী ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই। নদীতে ব্লক কিংবা জিও ব্যাগ ফেললে আশা করি নদী তীর রক্ষা বাঁধটি বাঁচবে। কুশিয়ারার ভাঙন ঠেকাতে নদী তীর রক্ষা বাঁধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট জেলার পূর্ব-উত্তর দিকে ঐতিহ্যবাহী বিয়ানীবাজার উপজেলা। বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তরে জকিগঞ্জ ও দক্ষিণে বড়লেখা উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য এবং পশ্চিমে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। সিলেট সদর থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। প্রাচীনকালে বিভিন্ন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলার নানা অঞ্চল। সিলেট ছিল হরিকেল জনপদের অন্তর্ভুক্ত এবং বিয়ানীবাজারের পূর্ব নাম ছিল পঞ্চখণ্ড। সিলেটের প্রথম রায় বাহাদুর হরেকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর ছেলে কৃষ্ণ কিশোর পাল চৌধুরী এই অঞ্চলে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদী বয়ে চলেছে। তার মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে সুরমা, কুশিয়ারা ও সুনাই নদী। কুশিয়ারা নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক নদীতে। জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, রাজনগর, মৌলভীবাজার, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুশিয়ারা নদী।
প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হিসেবে সিলেটে পরিচিত বিয়ানীবাজার। এ উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ভারতের বরাক নদী থেকে নেমে আসা কুশিয়ারা নদী। খরস্রোতা এ নদী যেদিকেই গেছে, তীর ভেঙে হারিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। নদী তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন প্রকল্প নিলেও সর্বগ্রাসী এ নদীর ভাঙন ঠেকাতে পারেনি।
আরও পড়ুন: সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়ন হয়ে ভাটির দিকে বয়ে গেছে কুশিয়ারা নদী। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে ভাঙছে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর। ইতোমধ্যে ভাঙনে নতীগর্ভে চলে গেছে রাস্তা, বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর গোরস্তান। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর থেকে ভাটির দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের বেশি নদী তীর রক্ষা বাঁধের কয়েক স্থানে ভেঙে যাওয়া জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দফায় দফায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নদী তীর রক্ষা বাঁধ সংস্কারের দাবি জানানো হলেও তা কাজে আসেনি।
স্থানীয়রা জানান, নদী তীর রক্ষা বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ব্লক কিংবা জিও ব্যাগ ফেললে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আঙ্গুরা মোহাম্মদপুরের মিজান আহমদ বলেন, দেখতে দেখতে কুশিয়ারা নদী আমাদের এলাকার কতকিছু গিলে খেল। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর থেকে ভাটির দিকে আমুড়া ইউনিয়ন পর্যন্ত তিন সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেকের বাড়িঘরও নদীতে হারিয়ে গেছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা অন্যত্র বাড়ি করলেও নদী তীরে দাঁড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়।
আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাহার উদ্দিন বলেন, গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে নদীর গতিপথ অনেক পাল্টে গেছে। যেখানে জনবসতি ছিল সেখানে আজ নদী আর যেখানে নদী ছিল সেখানে ভরাট হয়ে গেছে। আমাদের চলাচলের রাস্তা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় যাতায়াতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শরফ উদ্দিন বলেন, অব্যাহত নদী ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে ঝুঁকিতে থাকা বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর গোরস্তান নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন কষ্ট করছে, তেমনি দিনে কিংবা রাতে রোগী নিয়ে যাতায়াতও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
গোবিন্দশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন বলেন, নদী তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বর্ষাকালে ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। শুকনো মৌসুমেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে।
আরও পড়ুন: বিপৎসীমার ওপরে মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি
৩ সপ্তাহ আগে
বিপৎসীমার ওপরে মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায় বুধবার (৩ জুলাই) সকালে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে।
এর আগে মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল ৯টায় শহরের মনু সেতুর কাছে চাঁদনীঘাটে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার এবং সদর উপজেলার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এ এলাকায় কুশিয়ারার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নেই। গ্রামীণ সড়কটিই প্রতিরক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নতুন করে ভাঙনের ফলে আশপাশের গ্রামগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার উপরে বইছে ১৬ নদীর পানি
কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের শেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। এর মধ্যে বুধবার সকালের দিকে হামরকোনা মসজিদের কাছে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে গ্রামের ভেতর পানি প্রবেশ করছে।
ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী নদীর পানি অনেক দিন ধরেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার ৯টায় জুড়ীর পানি বিপৎসীমার ১৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনার ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২০ ফুট জায়গা ভেঙে যাওয়ায় গ্রামের দিকে পানি ঢুকছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, পানিপ্রবাহ বন্ধ করা না গেলে হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রাম ও শেরপুর বাজারের একাংশ প্লাবিত হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকে মৌলভীবাজারে মনু, কুশিয়ারাসহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। মনুর পানি মৌলভীবাজার শহরের মনু সেতুর কাছে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৯ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। একই জায়গায় বুধবার সকালে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে সদর উপজেলার শেরপুরে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারা নদীর পানি ছিল ৮ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার বা বিপৎসীমার নিচে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সেখানে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খলিলপুর ইউনিয়নের যেদিকে বাঁধ ভেঙে কুশিয়ারা নদীর পানি গ্রামে ঢুকছে, সে এলাকায় পাউবোর কোনো বাঁধ নেই। একসময় প্রতিরক্ষা বাঁধ হলেও এটি এখন মূলত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি গ্রামীণ সড়ক। কুশিয়ারা নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠলে বাঁধটির বিভিন্ন স্থান ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে।
পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘কুশিয়ারায় পানি বাড়লে মনুর পানি কমবে না। কুশিয়ারা নদীর খলিলপুর এলাকায় পাউবোর স্থায়ী কোনো বেড়িবাঁধ নেই। হামরকোনায় এলজিইডির রাস্তা ভেঙে খলিলপুর ইউনিয়নে পানি ঢুকছে।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ৬০০০ মানুষ পানিবন্দি
সিলেটে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, তৃতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা
৪ মাস আগে
সিলেটে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, তৃতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা
ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল ও রবিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে সিলেটে আবারও বাড়ছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। পানি বাড়তে থাকায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সিলেট অঞ্চলে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, সুরমা ও কুশিয়ারা, সারি, সারি গোয়াইন, ডাউকিসহ সব নদ-নদীর পানি রবিবার (৩০ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে বাড়ছে।
পাউবোর সিলেট কার্যালয় জানায়, সোমবার (১ জুলাই) সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এসময় পানি ছিল বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে। কিন্তু রবিবার পর্যন্ত পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি রয়েছে বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপরে।
আরও পড়ুন: সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে ফের বন্যার আশঙ্কা
কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার একাধিক বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উজানে বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে লোভা ও ডাউকি নদীতে ব্যাপক স্রোত বয়ে যাচ্ছে ও পানি বাড়ছে। নতুন করে সিলেটে ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হতে থাকলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
এতে আবারও দুর্ভোগে পড়তে হবে সিলেটবাসীকে।
গোয়াইনঘাটের জাফলং মামার বাজারের ব্যবসায়ী আকবুল মিয়া জানান, ‘গতকাল জাফলংয়ের ডাউকি নদীর পানি অনেক কম ছিল। উপর থেকে প্রবল বেগে পানি আসছে দেশে। আজ সকালে অনেক পানি দেখা যাচ্ছে।’
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩৯.৬ মিলিমিটার। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৬৫ মিলিমিটার। এদিকে চেরাপুঞ্জিতেও গতকাল প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩১৩ মিলিমিটার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সিলেট ও ভারতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারতের পাহাড়ি ঢলও আসছে। যে কারণে রবিবার সকাল থেকে বাড়তে শুরু করেছে জেলার সব নদ-নদীর পানি।
আরও পড়ুন: সিলেট-সুনামগঞ্জে আবারও বন্যার আশঙ্কা
৪ মাস আগে
সিলেটে নিখোঁজের ৩৬ ঘণ্টা পর কুশিয়ারা থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
সিলেটের গোলাপগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘন্টা পর এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) ভোর ৪টার দিকে উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের বাগলা ছয়ঘড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: শেরপুরে বন্ধ ঘর থেকে বৃদ্ধ দম্পতির লাশ উদ্ধার
মৃত দিরেশ দাস (৭০) উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের বাগলা ছয়ঘড়ি গ্রামের মৃত রমেশ দাসের ছেলে।
কুশিয়ারা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শেখর চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিখোঁজ হওয়ার ৩৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে তলিয়ে যাওয়া স্থানে বৃদ্ধের ভাসমান লাশ দেখতে পান তার স্বজনরা।
তিনি আরও বলেন, খবর পেযে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এরপর সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে নিখোঁজ শিশুর লাশ উদ্ধার করল পিবিআই
১ বছর আগে
কুশিয়ারা নদী থেকে অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার
সিলেটের বালাগঞ্জে কুশিয়ারা নদী থেকে অজ্ঞাত এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বালাগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সাজ্জাদ আবাসিক এলাকার কুশিয়ারা নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
অজ্ঞাত লাশটি একটি মেয়ে শিশুর। এখনও তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক তার বয়স আড়াই থেকে তিন বছর।
বালাগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহুর লাল বলেন,খবর পেয়ে আমরা শিশুর লাশটি উদ্ধার করেছি। এখনো লাশটির কোন পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আনুমানিক আড়াই থেকে তিন বছরের মেয়ে শিশুটির লাশটি নদীতে ভেসে এসে বালাগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সাজ্জাদ আবাসিক এলাকায় আটকে যায়।
শিশুর লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিখোঁজ শিশুর লাশ উদ্ধার
মাগুরায় শিশুর লাশ উদ্ধার
আড়িয়াল খাঁ নদে গোসলে নেমে ৩ শিশুর মৃত্যু
২ বছর আগে
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দৃশ্যমান কোনো অর্জন নেই: বিএনপি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফর থেকে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ‘দৃশ্যমান অর্জন’ নেই।
তিনি বলেন, ‘এই সফরে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যে অর্জন আমরা দেখতে পাচ্ছি তা হলো কুশিয়ারা নদী থেকে ৫৩ কিউসেক পানি। আমরা আর কোনো দৃশ্যমান অর্জন দেখিনি।’
ভারতের কাছ থেকে সামরিক যান কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ‘যেদিন এই কথা বলা হয়েছিল, সে দিনেই দিনাজপুর সীমান্তে একজন নিহত হয়েছিল এবং আরও দুইজন নিখোঁজ ছিল। এটিই (তার সফরের) ফলাফল।’
আরও পড়ুন: আন্দোলন বানচাল করতেই বিরোধীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন: বিএনপি
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এদিকে ভারতে চার দিনের সরকারি সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার সফরকালে, হাসিনা তার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছেন এবং মঙ্গলবার ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও ভারতীয় উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন।
দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর, ঢাকা ও দিল্লি কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সহযোগিতার সাতটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
ফখরুল বলেন, সফরে কোনো ফলাফল না আসলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভারতের প্রতি তাদের ভালোবাসা তুলে ধরছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আপনার অবশ্যই মনে আছে যে এই সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী (এ কে আব্দুল মোমেন) বলেছিলেন যেকোনো উপায়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ভারতীয় নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন।’
আরও পড়ুন: পাকুন্দিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দল বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে এবং বিশ্বব্যাপী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল গণতান্ত্রিক দেশ তাদের ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের ভালো বন্ধু এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশ। আমরা বিশ্বাস করি যে ভারতও তার গণতান্ত্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখবে।’
সরকার কর্তৃক সন্ত্রাসের রাজত্ব উন্মোচন
সারাদেশে তাদের দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা এবং তাদের নেতাকর্মীদের ‘মিথ্যা’ ও ‘কাল্পনিক’ মামলায় ফাঁসানোর জন্য ফখরুল সরকারের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অতীতের মতো আমাদের বিরুদ্ধেও কাল্পনিক মামলা করা হচ্ছে। আপনারা জানেন যে ইতিমধ্যে আমাদের তিন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কিশোরগঞ্জ শাখার ১৪ বছর বয়সী গুলিবিদ্ধ নেতা শ্রাবণকে দেখতে বৃহস্পতিবার পপুলার হাসপাতালে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ছেলেটির ফুসফুস, লিভার ও কিডনি গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘সে রক্ত বমি করছে... তার জীবন বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা।’
তিনি আরও জানান, শ্রাবণ ছাড়াও বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন এবং অনেকে বিভিন্নভাবে আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। ‘তারা (সরকার) আবারও সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব জারি করেছে। আমি বলতে চাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়ে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’
সহিংসতার আশ্রয় না নিলে বিএনপির কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হবে না বলে আইনমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়... ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে। গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। জনগণের শক্তি দিয়ে আমরা তাদের পরাজিত করব।’
আরও পড়ুন: যুবদল কর্মী হত্যা: পুলিশ সুপারকে আসামি করে বিএনপির মামলার আবেদন
২ বছর আগে
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কুশিয়ারা ছাড়া অধিকাংশ নদ-নদীর পানি কমেছে।
তবে কুশিয়ারার পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগও। বিশেষ করে এ নদী তীরবর্তী এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা মানুষের দিন কাটছে চরম উৎকন্ঠায়। কবে ঘরে ফেরা সম্ভব হবে, সে অপেক্ষায় আছেন তারা।
কানাইঘাট পয়েন্টে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমার পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সোমবার একই সময়ে তা ছিল ৩৪ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি কমেছে প্রায় ৮ সেন্টিমিটার।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
সিলেট পয়েন্টে সুরমা রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বইছিল বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। সোমবার একই সমযে তা ছিল ৩৫ সেন্টিমিটারের নিচে। এ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে ৭ সেন্টিমিটার।
এদিকে কুশিয়ারার পানি কমছেই না। রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমলশিদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৮ সেন্টিমিটার।
রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত শেওলায় কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার শূণ্য দশমিক ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সোমবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত বইছিল ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এ সময়ে পানি বেড়েছে প্রায় ১২ সেন্টিমিটার।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের নদীগুলোর পানি সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এবং সেখানে পানির উচ্চতা এখনো অনেক বেশি থাকায় কিছুটা সময় লাগছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ
বন্যা: সিলেটে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এএফডব্লিউসি) জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
২ বছর আগে
কুশিয়ারার আগ্রাসী রূপ: পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, নিহত ১
সিলেটের বিয়ানীবাজারে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে এবং কয়েকটি স্থানে ভাঙা ডাইক দিয়ে হুহু করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া ও মোল্লাপুর, ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে এসব ইউনিয়নের নতুন করে ৯০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বৈরাগী খশির এলাকার বসতঘর থেকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাহার উদ্দিন (৪০) নামের ওই আব্দুল্লাহপুর নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তি ওই পরিবারের গৃহকর্তা বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: ৬ দিন পর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠা-নামা শুরু
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ থেকে বাহার উদ্দিনের ঘরে পানি উঠে। পরে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় বৈরাগীবাজার সিনিয়র মাদরাসা আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেন। বুধবার বিকালে তিনি তার ডুবে যাওয়া ঘর দেখতে যান। এরপর পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান- তিনি বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন। বৃহস্পতিবার সকালে তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে এসে দেখেন, ঘরে পানির মধ্যে তার লাশ ভাসছে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় বাহারের লাশ উদ্ধার করে বৈরাগীবাজার সিনিয়র মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপরদিকে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার নব্বইভাগের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানববেতর জীবন যাপন করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত উপজেলার ৯৮৭টি পরিবারের প্রায় ছয় হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নূর জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুত করা ৫৩টি অস্থায়ী আশ্রয় ১০টি ইউনিয়ন ও একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৯৮৭ পরিবারের পাঁচ হাজার ৯২২ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এসব পরিবারের ৬২০টি গবাদিপশুও আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে বৃহস্পতিবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে
বিয়ানীবাজার পৌরশহর ছাড়া উপজেলার অন্যান্য হাটবাজারে বন্যার পানি ওঠেছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে জরুরি প্রয়োজনে নৌকা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বৈরাগীবাজার ও কাকরদিয়া এলাকায় প্রধান সড়ক দিয়ে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে।
সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা, মুড়িয়া ও তিলপাড়া ইউনিয়নের বহুগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জলঢুপ-লাতু সড়কের সিংহভাগ তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে টিলাবেষ্টিত নাওয়ালা, দক্ষিণ পাহাড়িবহরসহ আশপাশ এলাকা ডুবে গেছে।
আরও পড়ুন: কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় সিলেটের ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
২ বছর আগে
কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় সিলেটের ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
গত চার দিন বৃষ্টি কম হওয়ায় সিলেটের সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। একই সঙ্গে তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে ভারতের আসামের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মঙ্গলবার থেকে সিলেটের কুশিয়ারা তীরবর্তী ছয় উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে কয়েক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুশিয়ারা নদীর ডাইকের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ও ডাইক উপচে পানি ঢুকে জেলার জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জ মোট ছয়টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে এখনও সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীতে গত রবিবার থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়েছে। ফলে রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক মাস আগে বন্যার সময় যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল, তার পাশাপাশি নতুন নতুন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করা শুরু করেছে। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জকিগঞ্জ উপজেলার ৪০টি স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছিল। এর মধ্যে সুলতানপুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর, সদর ইউনিয়নের রারাই, বীরশ্রীর সুপ্রাকান্দি, কাজলসারের বড়বন্দ এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হওয়ার পাশাপাশি পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরও ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় মারা গেছে ৩ হাজারের বেশি গবাদিপশু
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদী ও তীরবর্তী এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বানের পানিতে উপজেলা সদরসহ ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলার অবস্থাও একই। কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে এবং ওপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে বাড়িঘর, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে বালাগঞ্জ-খছরুপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
তাছাড়া বন্যার কারণে জেলা সদরের সঙ্গে এখনও বিয়ানীবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ঠিক থাকলেও যে কোনো সময় তা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বুধবার সারাদিন বিয়ানীবাজার উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার চারখাই, আলীনগর, মুড়িয়া, শেওলা, দুবাগ, কুড়ারবাজার ও থানাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ওসমানীনগর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিও ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে। উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর, বুরঙ্গা, সাদিপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, উসমানপুর ও উমরপুর ইউনিয়নের পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুরমা তীরবর্তী বাঘাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকায় অবনতি হয়েছে। উপজেলার শরীফগঞ্জ, বাদেপাশা, ঢাকা দক্ষিণ, আমুড়া ও ভাদেশ্বর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারা তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সুরমা নদীর তীরবর্তী সিলেট নগরী, সদর, বিশ্বনাথ ও কানাইঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সিলেট নগরীর উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় এখনও লাখো মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বাকি উপজেলাগুলোতেও লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা নদীর পানি কমায় জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার পানি কিছুটা কমেছে। তবে পানি কমার গতি খুবই ধীর বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই তিন উপজেলার এখনও ৯০ ভাগ এলাকা প্লাবিত রয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম জানান, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ওই পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল। বুধবার বিকেলে ওই পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ছিল ১১ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার। বুধবার বিকালে হিসাব অনুযায়ী সেখানে পানি ছিল ১১ দশমিক ১১ সেন্টিমিটার।
আরও পড়ুন: সিলেট বিভাগে বন্যায় ৭ দিনে ২২ জনের মৃত্যু: বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
২ বছর আগে
সিলেটে বন্যা: সুরমায় পানি কমলেও বেড়েছে কুশিয়ারায়
সিলেটে কুশিয়ারা তীরবর্তী ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দুটিতে রয়েছে অপরিবর্তিত। আর সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, লোভা ও সারি নদী তীরবর্তী পাঁচ উপজেলায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের যেসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার। আগের দিন থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে সিলেট সদর, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায়। আর পরিস্থিতি অপরবর্তিত রয়েছে জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলার।কুশিয়ারা নদীর পানি মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় সকল পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধির ফলে বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার, মুড়িয়া, লাউতা, শেওলা, মাথিউরা, মোল্লাপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় মারা গেছে ৩ হাজারের বেশি গবাদিপশু
উপজেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারিভাবে সাড়ে ৩০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।বালাগঞ্জ উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধির ফলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত এলাকায় অন্তত ৬ ইঞ্চি পানি বেড়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর এলাকায় সিলেট-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার অন্তত ৬০ ভাগ মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি রয়েছেন।ওসমানীনগর উপজেলার কুশিয়ারা তীরবর্তী সাদিপুর, গোয়ালাবাজার ও পৈলনপুর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। উপজেলার বাকি এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গোলাপগঞ্জের কুশিয়ারা তীরবর্তী ৬ ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ও সুরমা তীরবর্তী ৩ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। একইভাবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সুরমা তীরবর্তী কুচাই, বরইকান্দি ও মোল্লারগাঁও ইউনিয়নে উন্নতি হলেও ফেঞ্চুগঞ্জ হয়ে কুশিয়ারার পানি ঢুকে মোগলাবাজার, দাউদপুর, জালালপুর ও সিলাম ইউনিয়নে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।এদিকে সিলেট সদর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ধীরগতিতে পানি নামছে। আর জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তিত রয়েছে।বন্যা আক্রান্ত উপজেলাগুলোতে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট ও হাটবাজার তলিয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এছাড়া খাদ্যসামগ্রীর দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যার্তদের সহায়তায় জরুরি ত্রাণ দেবে যুক্তরাষ্ট্র: রাষ্ট্রদূত
২ বছর আগে