দলের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নানা জল্পনা-কল্পনা ও ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার নয়াপল্টনে তার পুনর্নির্ধারিত মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
বিএনপি ছাড়াও ৩৭টি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটও আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ এক দফা দাবি তুলে আদায়ে বিভিন্ন মহানগরীতে পৃথক সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে।
এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিনটি সহযোগী সংগঠন- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ-এরও নয়াপল্টনে বিএনপির অনুষ্ঠানস্থল থেকে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে সমাবেশ করার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ জনদুর্ভোগ এড়াতে কর্মদিবসে তাদের নির্বাচিত স্থান ব্যবহার করতে না দেওয়ায় তারা শুক্রবার তাদের কর্মসূচি পুনঃনির্ধারণ করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য শান্তি বজায় রাখা এবং যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করা একটি কঠিন কাজ হবে। কারণ, বিরোধী দল এবং ক্ষমতাসীন উভয় পক্ষই স্বল্প দূরত্বে এবং একই সময়ে তাদের কর্মসূচি পালন করবে।
নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে দলটি বিরতিহীন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বলে জল্পনা চলছে বিএনপির মহাসমাবেশের দিকে সবার দৃষ্টি থাকবে।
বিভিন্ন জেলা সংবাদদাতাদের কাছ থেকে ইউএনবি ডেস্কে পৌঁছেছে এমন খবরে জানা গেছে, সমাবেশে যোগ দিতে সড়ক, রেল বা নৌপথে ঢাকায় এসেছেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ ডিএমপির
তবে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে এবং সমাবেশস্থলে পৌঁছার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, শুক্রবারের মহাসমাবেশের আগে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে দলের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হোটেলে অভিযান চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সমাবেশ বানচাল করতে বিভিন্ন উসকানি দেওয়ার অভিযোগও করেন।
আগের দিন (বৃহস্পতিবার) ২৩টি শর্তে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনকে যথাক্রমে নয়াপল্টন ও বায়তুল মোকাররমে শুক্রবার সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
পুলিশ কর্তৃপক্ষ জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার তাদের সমাবেশ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য উভয় রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপিকে তাদের মহাসমাবেশ কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল ক্রসিং থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে সীমিত রাখতে বলা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগকে তাদের সমাবেশ মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে মুক্তাঙ্গনে সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
উভয় দলের সমর্থকদের সমাবেশে কোনো লাঠি, বাঁশ ও ব্যাগ বহন না করার আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি।
ডিএমপির অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন এবং কর্মসূচি সফল করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন: মহাসমাবেশের আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা রিজভীর
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আব্বাস বিএনপির মহাসমাবেশে ইতিবাচক মনোভাবের জন্য ডিএমপি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে বিএনপিকে যথাযথ সহযোগিতা প্রদানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আশা করি সমাবেশের পথে জনগণ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো বাধা থাকবে না।’
বিএনপি নেতা বলেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে তাদের মহাসমাবেশ সফল করতে তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
এদিকে, তাদের পুনঃনির্ধারিত মহাসমাবেশের একদিন আগে বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভিড় করে, যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
সন্ধ্যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আবার জড়ো হতে শুরু করে এবং পরে দলের সিনিয়র নেতার নির্দেশে এলাকা ফাঁকা করে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিএনপি নেতাদের লাউডস্পিকার ব্যবহার করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আগামীকালের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য দলীয় সমর্থকদের আহ্বান জানাতে দেখা গেছে।
বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখার আয়োজনে দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরও পড়ুন: পুলিশের নির্দেশনা মেনে বিএনপির নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার নয়াপল্টন ছেড়েছেন
বিএনপির পাশাপাশি বিকাল ৩টায় পুরানা পল্টনে গণতন্ত্র মঞ্চ, ফকিরাপুলে ১২ দলীয় জোট, বিজয়নগরে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, পূর্ব পান্থপথে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আরামবাগে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, লেবারপার্টি সমাবেশ করার কথা রয়েছে। একই সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণ অধিকার পরিষদ (কিবরিয়া), ফকিরাপুল কালভার্ট রোডে গণ অধিকার পরিষদ (নূর), মালিবাগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এবং শাহবাগে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
এছাড়া সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং বেলা ১১টায় বিজয়নগরে এবি পার্টি সমাবেশ করবে।
এর আগে বুধবার রাতে, পুলিশ কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপি বৃহস্পতিবার গোলাপবাগ মাঠে কর্মসূচি করতে রাজি না হওয়ায় শুক্রবার তাদের মহাসমাবেশ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
বিএনপির পদক্ষেপের পর আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন- ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগও বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।
গত শনিবার ফখরুল তাদের চলমান যুগপৎ সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: মহাসমাবেশের আগে বিএনপির ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার: রিজভী