তিনি বলেন, ‘যারা দলের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধপন্থায় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়েছে। তার নির্দেশেই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযান শুধু ঢাকা সিটিতেই নয়, সারা বাংলাদেশে চলবে।’
আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা, ভূমি দখলকারীরা, জুয়াড়িরা, টেন্ডারবাজরা, চাঁদাবাজরা, মাদক ব্যবসায়ীরা সাবধান। শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। এই অ্যাকশনের টার্গেট থেকে কোনো অপকর্মকারী রেহাই পাবে না।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দল থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এই সৎ সাহস তার আছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে আর কোনো শাসক, আর কোনো প্রধানমন্ত্রী, আর কোনো রাষ্ট্রপতি এই সৎ সাহস দেখাতে পারেননি যে নিজের দলের অপকর্মকারী, অপরাধীকে শাস্তি দিয়েছেন,’ বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে বড় বড় কথা বলেন মির্জা ফখরুল সাহেব। বুকে হাত দিয়ে বলুন, হাওয়া ভবন, খাওয়া ভবন, লুটেরা ভবন, সারা বাংলাদেশকে লুট করেছেন। খুনে খুনে বাংলাদেশ রক্তনদী হয়ে গেছে। লাশে লাশে বাংলাদেশ, লাশের পাহাড় হয়ে গেছে। বিচার কি হয়েছে? শাস্তি কি কেউ পেয়েছে? আজকে বড় বড় কথা বলেন। গলাবাজি করেন।’
আওয়ামী লীগের নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না। ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারে না। আজকে বসন্তের কোকিলরা যদি দলের নেতৃত্ব নেয়, তারা যদি প্রাধান্য পায়, আবারো দুঃসময় আসতে পারে। আবারো দুর্যোগ আসতে পারে। আবারো অমানিশা আসতে পারে। সে সময় হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এই সুবিধাবাদি অপকর্মকারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
‘খারাপ লোকের আমাদের দরকার নেই। ক্লিন ইমেজের পার্টি দরকার, আগামী জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে আমরা আমাদের দলকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মডেলে ঢেলে সাজাতে চাই। আমরা ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চাই সারাদেশে। খারাপ ইমেজের লোক, যাদের ভাবমূর্তি নেই, এই সব লোকদের দলে টেনে পাল্লা ভারি করে কোনো লাভ নেই। দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। আমার দুষ্টু গরুর দরকার নেই,’ যোগ করেন তিনি।
আগামী জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সকল মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করার তাগিদ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের আগেই তৃণমূলের মেয়াদ উত্তীর্ণ সকল কমিটি করতে হবে। এ নিয়ে কারও গাফিলতি সহ্য করা হবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং সদস্য মেরিনা জাহান।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পরিচালনায় সভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনার এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, রাজশাহীর এমপি এনামুল হক, আয়েন উদ্দিনসহ বিভাগের অন্যান্য আসনের এমপিরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা, উপজেলা এবং পৌরসভা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক যোগ দেন। প্রতিটি জেলা থেকে একজন নেতা সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির বর্তমান পরিস্থিতিসহ সাংগঠনিক অবস্থান তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় নেতারা সেসব কথা শোনেন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেন। সভায় অংশগ্রহণকারী সবাই চলমান অভিযানকে স্বাগত জানান।