বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সরকারের অধীনে দেশে প্রায় তিন হাজার মানুষ পুলিশ, র্যাব, ডিবির হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এবং এর অধিকাংশই বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী।’
নিজের উত্তরার বাসভবনে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গত দশ বছরে জেল কাস্টডিতে মারা গেছে ৭৯৫ জন মানুষ। গুম হয়েছে ৬০১ জন।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, এ সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭ হাজার ৮০৬ জন নারী, ১ হাজার ৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে এবং ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির কমপক্ষে ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখেরও বেশি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। ‘এ পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার স্বদেশ প্রিয় জন্মভূমি আজ মৃত্যু উপত্যকা, জল্লাদের রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়েছে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) প্রদত্ত পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৯৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ২০১৯ সালে ৩৮৮, ২০১৮ সালে ৪৬৬, ২০১৭ সালে ১৬২ এবং ২০১৬ সালে ১৯৫ জন মারা গেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, তার পরিবারের সদস্যরা তাকে হত্যার অভিযোগে পুলিশে মামলা করেছে।
‘সাধারণ মানুষ খুব কমই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সাহস করে। গর্বিত সেনাবাহিনীর একজন মেজরের এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা, সমগ্র জাতি যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে তাতে মেজর সিনহার পরিবার সাহস পাচ্ছে। বিচারপ্রার্থী হতে পারছে। আমরাও মেজর সিনহা হত্যার বিচার চাই, সকল বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের বিচার এক দিন এ দেশের মাটিতে হবে সে আস্থা এবং বিশ্বাস রাখি,’ যোগ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। ‘যদি তাই হয়, তাহলে আমরা বলতে চাই, ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড ঘটানো বা না ঘটানো পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঠাণ্ডা মাথার সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত।’
তিনি বলেন, তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্রসফায়ারের ঘটনার পরে পুলিশ বাহিনী ‘মিথ্যা ও মনগড়া’ গল্প তৈরি করত।
ফখরুল বলেন, ‘সিনহার হত্যার পরে আমাদের এ বক্তব্য সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সিনহা হত্যার বিষয়ে পুলিশ যে ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে তাতে ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছেন যে এতে অনেক নিরীহ মানুষকে জড়িত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টিকে অন্য দিকে নিতে এবং আসল অপরাধীদের আড়াল করার জন্য ক্রাইম ফিকশন গল্পটি তৈরি করা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কারণ তারা আগে তাদের বিরোধী দল ‘নির্মূল’ এবং মধ্যরাতে ভোট প্রদানের কাজে ব্যবহার করেছে। ‘এ ফ্যাসিবাদী সরকার মানুষের জন্য দানব হয়ে উঠেছে। আমরা এ পরিস্থিতির অবসান চাই। আমরা বিশ্বাস করি যে এ ফ্যাসিবাদী সরকার জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরে যেতে বাধ্য হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘বিনাবিচারে মানুষ খুন-গুম কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যায় না, আমাদের সংবিধান এটাকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এ ধরনের খুন-গুম-অত্যাচার- নিপীড়ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের ১৯৭৩ এর ধারা-২(২)(ক) এর অধীন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশকে একটি ‘মানবতাবিরোধী ফ্যাসিবাদী’ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।