কীভাবে এটি শরীরে আক্রমণ করে? লক্ষণগুলো কী কী? কাদের গুরুতর অসুস্থ বা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে? আপনি কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?
জিনিনটান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রথম ৯৯ জন রোগীর বিশদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে।
ফুসফুস আক্রমণ:
হাসপাতালে নেয়া ৯৯ জন রোগীর প্রত্যেকেরই নিউমোনিয়া হয়েছিল। তাদের ফুসফুস ফুলে উঠেছে। কারণ ফুসফুসে যে ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ থাকে, যার মধ্যে দিয়ে বাইরের বাতাস থেকে আসা অক্সিজেন রক্তে প্রবাহিত হয়, সেই প্রকোষ্ঠগুলোয় পানি জমে গেছে।
অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো:
১. ওই ৯৯ জন রোগীর মধ্যে ৮২ জনের জ্বর ছিল।
২. ৮১ জনের ছিল কাশির সমস্যা।
৩. শ্বাসকষ্টে ভুগছিল ৩১ জন।
৪. পেশী ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছিল ১১ জন।
৫. দ্বিধাগ্রস্ততা বা বিভ্রান্তির মুখে পড়েছিল ৯ জন রোগী।
৬. তীব্র মাথাব্যথা ছিল আটজনের।
৭. পাঁচজনের ছিল গলা ব্যথার সমস্যা।
প্রথম মৃত্যু:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম দুজন রোগী আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ ছিলেন, যদিও তারা দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপান করতেন এবং যেটা তাদের ফুসফুস দুর্বল করে দিয়েছিল।
হাসপাতালে আসার পরে প্রথমে যিনি মারা যান, তার বয়স ৬১ বছর। তিনি গুরুতর নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। অর্থাৎ নিজের দেহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তার ফুসফুস পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছিল না। একটি ভেন্টিলেটর লাগানো সত্ত্বেও তার ফুসফুস অকেজো হয়ে পড়ে এবং তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ১১ দিনের মাথায় মারা যান ওই ব্যক্তি।
মারা যাওয়া দ্বিতীয় রোগীর বয়স ছিল ৬৯ বছর। তিনিও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। তার শরীরে একটি কৃত্রিম ফুসফুস বা ইসিএমও (এক্সট্রা কর্পোরাল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন) মেশিন যুক্ত করা হয়। তবে সেটাও তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। গুরুতর নিউমোনিয়া এবং সেপটিক শক থেকে তার রক্তচাপ কমে যাওয়ায় তিনি মারা যান।
কমপক্ষে ১০% রোগী মারা যান:
২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জিনিনটান হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯৯ জন রোগীর মধ্যে ৫৭ জন এখনও হাসপাতালে আছেন। ৩১ জন রোগীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে এবং ১১ জন রোগী মারা গেছেন।
এর অর্থ এই নয় যে এই রোগের মৃত্যুর হার ১১ শতাংশ। যদিও এখনও হাসপাতালে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকের মধ্যে লক্ষণগুলো এতোটাই হালকা যে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়ছে না।
বাজার কর্মী:
উহান শহরের হুয়ানান সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই সংক্রামক ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বলা হচ্ছে ওই বাজারে বিক্রি হওয়া জীবন্ত প্রাণীগুলো এই ভাইরাস ছড়ানোর পেছনে দায়ী। এই সংক্রমণকে বলা হচ্ছে ২০১৯-এনসিওভি বলে। যার অর্থ ২০১৯ সালে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস। আর ওই ৯৯ জন রোগীর মধ্যে ৪৯ জনেরই এই বাজারে সরাসরি যাওয়া আসা ছিল।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রথম ৯৯ জন রোগীর মধ্যে ৪৭ জন রোগী ওই বাজারটিতে কাজ করতেন। কেউ হয়তো ম্যানেজার ছিলেন অথবা কেউ ছিলেন দোকান কর্মী। এছাড়া দুজন ছিলেন সাধারণ ক্রেতা। যারা কিছু কেনাকাটার জন্য ওই বাজারে গিয়েছিলেন।
এই ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন মধ্যবয়সী পুরুষরা। ৯৯ জন রোগীর বেশিরভাগই মধ্যবয়সী ছিলেন, যাদের গড় বয়স ৫৬ বছর এবং ওই ৯৯ জনের মধ্যে ৬৭ জনই পুরুষ।
তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগুলোয় এই রোগে আক্রান্ত হওয়া নারী পুরুষের সংখ্যার ব্যবধান অনেকটাই কমে আসে। চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রসমূহ জানিয়েছে যে প্রতি ১ জন নারীর অনুপাতে ১.২ জন পুরুষ সংক্রমিত হয়েছেন।
নারী ও পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার এই ব্যবধান নিয়ে দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে:
প্রথমত, পুরুষদের মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে এবং তাদের হাসপাতালের চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কারণে এই প্রাদুর্ভাবের শুরুতে পুরুষদের ভাইরাসে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকতে পারে।
চিকিৎসক লি ঝাং জানান, ‘এক্স ক্রোমোজোম এবং যৌন হরমোনের কারণে নারীদের শরীর তেমন ভাইরাস সংবেদনশীল হয় না অর্থাৎ তাদের ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখে।’
যারা ইতিমধ্যে অসুস্থ:
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ওই ৯৯ জনের মধ্যে বেশিরভাগই অন্যান্য নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আগে থেকেই দুর্বল করে দেয়। ফলে ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে না।
৪০ জন রোগী আগে থেকেই দুর্বল হার্ট অথবা রক্তনালীর সমস্যায় ভুগছিলেন। যার কারণে তারা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এছাড়া ১২ জন রোগীর ডায়াবেটিস ছিল।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা