সরকারি তথ্যমতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৪ জন মারা গেছেন। যদিও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি।
ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় যেসব পরিবারে হৃদরোগী আছে তাদের মধ্যে বিশেষ উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। খবর বিবিসি বাংলা’র।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ ও এর মধ্যে শীর্ষস্থানে আছে হৃদরোগ। দেশের মোট মৃত্যুর শতকরা ২৭ ভাগই হৃদরোগের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
সোসাইটি অফ কার্ডিওভাস্কুলার ইন্টারভেনশনের মতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে হৃদরোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।
দেশে ঠিক কতজন মানুষ হৃদরোগ সম্পর্কিত সমস্যায় আক্রান্ত তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে জনসংখ্যার ২০ শতাংশই হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছে।
ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ার কারণে হৃদরোগীদের নিয়ে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রাজিব কুমার সাহা বলেন, যথাসময়ে পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু জ্বর প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পরে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত কেউ যদি এ জ্বরে আক্রান্ত হন তাহলে তাকে আরও দ্রুততার সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কী পদক্ষেপ নিবেন হৃদরোগীরা
রাজিব কুমার সাহা বলছেন, যিনি ইতিমধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের সবসময় সর্তক থাকতে হবে এডিস মশা যাতে কামড়াতে না পারে। ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ যেসন- অনেক জ্বর, বমি হওয়া, শরীরে র্যাশ ওঠা কিংবা পাতলা পায়খানা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খুব দ্রুত না আসলে হৃদরোগীর জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। কারণ হৃদরোগীরা যেসব ওষুধ সেবন করে সেগুলো সাধারণত রক্ত তরল করার জন্য। এগুলো এন্টি প্লেটলেট। আবার ডেঙ্গু হলে প্লেটলেট ভেঙ্গে যায়। তাই দুটি মিলে কি হতে পারে সহজেই বোঝা যায়। তাই জ্বরের লক্ষ্মণ বোঝা গেলেই দ্রুত পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে।
ঝুঁকি কোথায়?
রাজিব কুমার সাহা হৃদরোগে আক্রান্তদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হচ্ছে-
১. প্রেশার কমে যাওয়া
২. হাইপোটেনশন থেকে বিপদ হওয়ার ভয়
৩. ডেঙ্গু থেকে লিভার আক্রান্ত হতে পারে। বিলুরুবিন বেড়ে যাতে পারে।
৪. রক্তের অণুচক্রিকায় রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া
৫. হৃদরোগ ছাড়াও যারা উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ফেইলিউরের ওষুধ নিচ্ছেন তাদের সেসব ওষুধ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে
হৃদরোগ ও ডেঙ্গু: কোনটির চিকিৎসা আগে?
ডা. রাজিব কুমার সাহা বলছেন, প্রথমে জ্বর নিয়ন্ত্রণে এনে শরীরের ফ্লুয়িড ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। প্রেশার ঠিক করতে হবে। জ্বর কমে গেলে হার্টের চিকিৎসায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
সে কারণেই হৃদরোগে যারা ভুগছেন তাদের অধিকতর সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আবার ডেঙ্গু জ্বর সেরে গেলে হৃদরোগের চিকিৎসার যেসব ওষুধ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব সেসব ওষুধ আবার চালু করতে হবে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।