এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অংশের দ্বীপাঞ্চলগুলো ভ্রমণের আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম থাইল্যান্ড। বিশেষ করে দেশটির বিচিত্র জনপদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভ্রমণপিপাসুদের এক অমোঘ আকর্ষণে কাছে টানে। এমন স্মরণীয় অভিজ্ঞতার হাতছানি দিয়ে যে দর্শনীয় স্থানগুলো দেশটির পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে রেখেছে, সেগুলোর মধ্যে কোহ সামুই অন্যতম। দ্বীপটির একাধিক সৈকতের প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও সর্বত্র জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। চলুন, কোহ সামুই দ্বীপের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোর ব্যাপারে বিশদ জেনে নেওয়া যাক।
কোহ সামুই দ্বীপের অবস্থান ও বিশেষত্ব
স্থানীয়ভাবে সংক্ষেপে সামুই হিসেবে পরিচিত এই দ্বীপটি সুরত থানি শহরের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে থাইল্যান্ডের উপসাগরে অবস্থিত। ভৌগলিকভাবে এটি সুরত থানি প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত চুমফোন দ্বীপপুঞ্জের অংশ। ফুকেটের পর এই ২২৮ দশমিক ৭ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটি থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ।
কোহ সামুই নামকরণের ইতিহাস
দ্বীপটির নামের উৎপত্তি নিয়ে স্পষ্ট তেমন কিছু জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয়, ‘সামুই’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত-তামিল শব্দ থেকে, বাংলায় যার অর্থ ‘সমুদ্রের আবহাওয়া’। কেউ কেউ বলেন এটি আসলে একটি গাছের নাম, দক্ষিণ থাইল্যান্ডে যাকে ‘টন মুই’ (যার পুরো নাম টন সামুই) বলা হয়। স্থানীয়দের মধ্যে কারো কারো বিশ্বাস, ‘সামুই’ শব্দটি এসেছে মালয় শব্দ ‘সাবোয়ে’ থেকে, যার অর্থ ‘নিরাপদ আশ্রয়’। ‘কোহ’ বা ‘কো’ একটি থাই শব্দ এবং এর মাধ্যমে কোনও দ্বীপকে বোঝানো হয়।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার বাটাম দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
কোহ সামুই দ্বীপ ভ্রমণে কি কি দেখবেন
ওয়াত ফ্রা ইয়াই
এটি মূলত একটি বৌদ্ধ মন্দির, যার অবস্থান কো সামুইয়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট এক দ্বীপ কো ফানে। এখানে রয়েছে ১২-মিটার উচ্চতার এক বিশালাকৃতির বুদ্ধ মূর্তি। মন্দিরটির কাছাকাছি সমুদ্র সৈকতের নাম ব্যাং রাক হলেও এই মূর্তির জন্য বিগ বুদ্ধ বিচ নামে ডাকা হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে একটি বাজারে পর্যটন এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নানা ধরণের সামগ্রী বিক্রি করা হয়।
সিক্রেট বুদ্ধ গার্ডেন
এই দর্শনীয় স্থানটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন ম্যাজিক গার্ডেন, হ্যাভেন্স গার্ডেন, খুন নিম পিক, এবং তার্নিম ম্যাজিক গার্ডেন। এটি মূলত পম পর্বতের চূড়ায় (সামুই দ্বীপের সর্বোচ্চ চূড়াগুলোর মধ্যে অন্যতম) নির্মিত একটি ব্যক্তিগত ভাস্কর্য পার্ক। স্থানটিতে বুদ্ধের অনেকগুলো মূর্তির পাশাপাশি দেখা যায় পাখি ও সাপসহ নানা ধরণের প্রাণী। বাগানে একটি ঝর্ণাও আছে। পবর্ত চূড়া পর্যন্ত উঠে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হলেও জায়গাটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়।
মু কো আং থং জাতীয় উদ্যান
এই সামুদ্রিক উদ্যানটি থাইল্যান্ড উপসাগরের প্রায় ১০২ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে প্রায় ৫০ বর্গ কিলোমিটার স্থলভাগে পড়েছে ৪২টি দ্বীপ এবং বাকি ৫২ বর্গ কিলোমিটারের সবটুকু পানি। দ্বীপগুলোর বিশেষত্ব হলো অত্যাশ্চর্য শিলা গঠন এবং নির্জন লেগুন। সাঁতার, ক্যানোয়িং এবং কায়াকিংয়ের জন্য এই স্থানগুলো সেরা।
দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কো ফালুয়াই পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে একদম নতুন। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে কো উয়া তালাপ। এর আও ফি সৈকতে একটি রেঞ্জার স্টেশন, বাংলো, দোকান এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে।