মা দিবসে সন্তানের পক্ষ থেকে মায়ের জন্য ছোট্ট একটি উপহার মায়ের কাছে পরিণত হতে পারে একটি অমূল্য সম্পদে। যদিও মূল্যমানের দিক থেকে পৃথিবীর কোনো উপহার-ই মায়ের অবদানের সমতুল্য নয়, এরপরেও ছোট্ট একটি উপহার বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পারে। বস্তুগত দিক থেকে উপহারটি নিছক একটি টোটেম মাত্র। কিন্তু তার নেপথ্যে যে ভালবাসার প্রকাশ ঘটছে, সেটাই এখানে প্রধান। মা দিবসে মাকে চমকে দিতে চলুন জেনে নেয়া যাক দারুণ কিছু উপহারের খোঁজ।
মা দিবসে মায়ের জন্য সেরা ১০টি উপহার
পছন্দের খাবার
মায়ের প্রতি আবেগের অভিব্যক্তি প্রকাশের সেরা উপায় হলো তার পছন্দের খাবারটি বানিয়ে তাকে খাওয়ানো। হতে পারে সেটা দুপুরের কোন খাবার আইটেম বা বিকালের হাল্কা খাবার। মিষ্টান্ন খাবার অথবা কোনো ঝাল ভর্তা যেটা বাসায় খুব একটা বানানো হয় না। মাকে না জানিয়ে আগের দিন রাতে বানিয়ে রেখে পরের দিন মাকে চমকে দেয়া যায়। আবার রান্না ঘরে মায়ের সঙ্গে গল্প করতে করতে একসঙ্গে মিলে বানানো যেতে পারে খাবারটি। এভাবে একসঙ্গে রান্নায় মায়ের সঙ্গে দারুণ একটি সময় কাটানো যাবে আর রান্নাপ্রিয় মায়েরা ভীষণ খুশিও হবেন।
প্রিয় বই
মা যদি বই পড়তে ভালবাসেন, তাহলে যে ধরনের বই তিনি সব সময় পড়েন তার সর্বশেষ সংস্করণটি যোগাড় করা যেতে পারে। এই পুরনো ও অকৃত্রিম উপহারটি যে কোনো বইয়ের পোকাকে নিমেষেই পুলকিত করতে পারে। বই পড়ার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও আরামের জায়গাটা অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত। দিনের সবচেয়ে প্রিয় মুহুর্তটিতে অনেকেই বেশ আয়োজন করে সময় কাটাতে বই নিয়ে বসে পড়েন। তারপর হারিয়ে যান নিজের প্রিয় কোন জগতে। আর সেই বইটি যদি হয় নিজের সন্তানের দেয়া তাহলে তার থেকে অমূল্য সম্পদ আর কিই বা হতে পারে।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
রান্নার সরঞ্জাম
গৃহিণী মায়েদের দিনের সিংহভাগ সময় কাটে রান্নাঘরে। সন্তানসহ ঘরের প্রতিটি মানুষের আহারের দিকটা খুব দায়িত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখেন এই মানুষটি। নিজে খাওয়ার থেকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে খাইয়েই তিনি বেশি আনন্দ পান। তাই রান্নার কাজে সাহায্য হয় এমন কোনো সরঞ্জাম উপহার তাঁর জন্য শুধু চমকপ্রদই হবে না, নিজের ভালবাসার রান্নার কাজটিতে তিনি আরও বেশি করে মনোন্নিবেশ করতে পারবেন। রাইস কুকার, ওভেন, ব্লেন্ডারের মত রান্নাঘরের সংযোজনগুলো ক্লান্তিকর কাজগুলোকে আরও সহজতর করে তুলবে। শুধু গৃহিণী নয়; কর্মব্যস্ত মায়েদের জন্যও এই উপহারগুলো একটি সঠিক পছন্দ হতে পারে।
অলঙ্কার
উপহারের জিনিসটি যত দামিই হোক না কেন; মায়ের ভালবাসার কাছে সে সবই মূল্যহীন। এরপরেও নিজের পরিশ্রম ও কষ্টার্জিত উপার্জনকে মায়ের ভালবাসায় সিক্ত করার এক উপযুক্ত প্রয়াস হতে পারে এই উপহারগুলো। এটি হতে পারে মায়ের ঘরে ভেতরেই প্রতিদিন পড়ে থাকা কানের দুল বা বাইরে গেলে টুকটাক সাজসজ্জায় মা যেগুলো ব্যবহার করেন সেই অলঙ্কারগুলো। এর যেকোনটিই হিরা দিয়ে বাঁধিয়ে উপহার দেয়া যেতে পারে মাকে। এটি হতে পারে একজন সন্তানের পক্ষ থেকে তার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারীটিকে আরও বেশি সুন্দর করে তোলার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।
আরও পড়ুন: গ্যালারি চিত্রকে বিপাশা হায়াতের ‘প্রস্তরকাল’
মায়ের জন্য শাড়ি
বাঙালী নারীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে এই বিশেষ পোশাক শাড়ি। ঘর থেকে শুরু করে বাঙালী সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত যে কোন অনুষ্ঠানে নারীর সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের অবিসংবাদিত প্রতীক এই শাড়ি। এই মা দিবসে এই সৌন্দর্য সূচকটি দিয়ে সাজিয়ে তোলা যেতে পারে মাকে। মাকে সঙ্গে করে তার প্রিয় রঙের সন্নিবেশে তারই পছন্দ করা প্রিয় শাড়িটি কেনা যেতে পারে। এছাড়া মাকে না জানিয়ে আগে থেকে কিনে রেখে মা দিবসে তাকে চমকে দেয়া যেতে পারে। ভালবাসার প্রকাশ করতে নয়; বরঞ্চ আপন আনন্দের আতিশয্যে সন্তানের দেয়া এই উপহারটি মা পরম মমতায় অঙ্গে ধারণ করে ঘরের যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবেন।
ফুল গাছ
মায়েদের প্রিয় কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে ঘর সাজানো। নানা ধরনের জিনিসপত্র দিয়ে বারান্দা থেকে শুরু করে ঘরের আনাচে কানাচে প্রতিটি অংশে মায়ের স্পর্শে মিশে থাকে। এই সৌন্দর্যবর্ধক বস্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে ফুল গাছ। শো পিস বা কৃত্রিম ফুল গাছ হোক অথবা সত্যিকারের ছোট্ট টবের ফুল গাছ-ই হোক; ঘরের অন্যান্য আসবাব ও ফার্নিচারের সঙ্গে সেই ফুল গাছের সজ্জায় দারুণ এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আর এটা সম্ভব করেন মা তার অদ্ভূত নৈপুণ্য দিয়ে। জানালার গরাদে বা বারান্দার ছোট্ট বাগানটির জন্য ছোট্ট একটি ফুল গাছ মা দিবসের সেরা উপহার হতে পারে।
আরও পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
একসঙ্গে পছন্দের টিভি অনুষ্ঠান দেখা
সন্ধ্যার পর মায়েদের প্রিয় কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে টিভিতে তাদের পছন্দের অনুষ্ঠানটি দেখা। সারাদিন সংসার গোছানোর মাঝে তাদের বিনোদনের জায়গাটি থাকে না বললেই চলে। মুলত প্রিয় মানুষগুলোর দিকে খেয়াল রাখার কাজটি মনপ্রাণ ঢেলে করার মাঝেই তারা বিনোদন খুঁজে নেন। এরপরেও যতটুকু অবসর মেলে সেটুকু কোন টিভি নাটক বা রিয়েলিটি শো দেখে কাটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এই সময়টিতে যখন সন্তান সঙ্গী হয়, তখন সে আনন্দ যেন বহুগুণ বেড়ে যায়। পরিবারের সবাই মিলে যে কোন নাটক, সিনেমা ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখলে নিমেষেই উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
নিত্য ব্যবহার্য প্রসাধনী
মায়ের নিত্য ব্যবহার্য চিরুনি, তেল, সুগন্ধী ও ক্রিমসহ নানা প্রসাধনীগুলো উপহারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মায়ের সঙ্গেই থাকা যেতে পারে। সন্তান অনেক দূরে থাকলেও তার দেয়া প্রসাধনীগুলো মাও অনেক যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবেন। যদিও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়েদের এ ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারের প্রবণতা কমে যায়। কিন্তু এই প্রসাধনীগুলো সন্তানের পক্ষ থেকে শুধু উপহারই নয়; মায়ের নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেয়াতেও উদ্বুদ্ধ করবে। বিভিন্ন সময় পরিবারের বাইরের লোকদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার সময় তাদের সামনে মায়ের সাবলীল উপস্থিতির দিকে দৃষ্টি রাখা সন্তানের কর্তব্য।
আরও পড়ুন: বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানবদেহে সফলভাবে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন
ভিডিও বা ফটো অ্যালবাম
সন্তানের বড় হওয়ার প্রতিটি ফ্রেমবন্দি মুহুর্তগুলোকে আত্মীয়-স্বজনকে দেখাতে পছন্দ করেন প্রতিটি মা-ই। এই ভালো লাগাটিকেই আরও বাড়িয়ে দিতে পারে সন্তানের সঙ্গে কাটানো সেরা কিছু মুহুর্তের ভিডিও বা ফটো অ্যালবাম। জন্মদিন, কোথায় ঘুরতে যাওয়া, বাসায় বিশেষ কোন অতিথির আগমন ইত্যাদি পারিবারিক সময়গুলোতে মায়ের সঙ্গে অতিবাহিত দারুণ মুহুর্তগুলোকে রেকর্ড করে উপহার দেয়া যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সন্তানের বিশেষ অর্জনের কথা জানানোর পর মায়ের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করে রাখা যেতে পারে। অতঃপর অনেক দিন বাদে ভিডিও বা ছবিগুলো মাকে দেখালে এক অবিস্মরণীয় মুহুর্তের জন্ম দিতে পারে।
প্রিয় জিনিস দিয়ে ঘর গোছানো
কোনো মা-ই তার সন্তানের কাছ থেকে কোন বিনিময় আশা করেন না। এরপরেও হঠাৎ কোন দিন বাড়িতে ঢুকে নিজের পছন্দের যাবতীয় জিনিস দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো ঘর দেখে মা অবাক বনে যেতে পারেন। সন্তানরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পছন্দগুলো দিয়ে প্রতিস্থাপিত হতে থাকে মায়ের পছন্দগুলো। এক সময় নিজেই ভুলে যেতে বসেন অনেক আগে তার কি পছন্দ ছিলো। তাই এক্ষেত্রে সন্তানদের সাহায্য করতে পারেন বাবা ও নানা-নানীরা। মায়ের শৈশবের হারিয়ে যাওয়া আঁকার খাতা, শিক্ষাজীবনের বড় বড় অর্জন, প্রিয় শো-পিস, ওয়ালম্যাট প্রভৃতি যোগাড় করা খুব কষ্টসাধ্য হলেও তা মায়ের অমূল্য প্রতিক্রিয়ার কাছে অচিরেই ম্লান হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
শেষাংশ
কাজসহ বিভিন্ন কারণে যাদের মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয় তারা মায়ের প্রতি টানটা বেশি অনুভব করে থাকেন। তবে যারা প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখতে পান তারা মায়ের জন্য আলাদা করে বিশেষ কিছু করার কথা প্রায়ই ভুলে গিয়ে থাকেন। এখানে মা দিবস উদযাপনটি হতে পারে সেই কর্তব্যের চেতনাটি জাগ্রত করার মাধ্যম। এই ছোট্ট প্রয়াসে হয়ত মায়ের ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়, তবে অবাক বনে যাওয়ার মায়ের মুখে যে হাসিটা ফুটে উঠবে তা যে কোন সন্তানের জন্যই সারা জীবনের পাথেয়।