ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে দুই দিন ধরে পড়ে থাকা নারী ও চিকিৎসাধীন দুই বছরের শিশুর পরিচয় মিলেছে।
শিশুটির নাম মেহেদি হাসান জায়েদ এবং তার মায়ের নাম জায়েদা।
তিনি সুনামগঞ্জের দুয়ারা উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. রমিজ উদ্দিনের মেয়ে।
আরও পড়ুন: সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকের ডোপটেস্টসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে অভিভাবকের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হবে।
ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ময়মনসিংহের স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ওই শিশু ও তার মা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। পরে এক নারী ও তিন পুরুষ ওই শিশু ও তার মাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ নম্বর ওয়ার্ডে পরদিন সন্ধ্যায় মা মারা যান। আহত শিশুটি মাথায় আঘাত নিয়ে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ওয়ার্ডের চিকিৎসক ফারজানা কাউসার বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে। অবুঝ শিশুটি হাসপাতালে অবিরাম কাঁদছিল। উপস্থিত লোকজন শিশুটিকে কোলে নিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
নেটিজেনরা আবেগতাড়িত হয়ে পরিচয় জানতে চেয়ে নিজেদের টাইমলাইনে শিশুটির ছবিসহ পোস্ট করতে থাকেন। ফেসবুকে মায়ের মৃত্যু ও আহত শিশুটি চিকিৎসাধীন থাকার খবর দেখে ময়মনসিংহে ছুটে আসেন নিহত জায়েদা খাতুনের বড় ভাই রবিন মিয়া।
তিনি বলেন, ফেইসবুকের মাধ্যমে জায়েদার মৃত্যুর খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে লাশ নিতে আসেন। শিশুটির নাম জায়েদ।
রবিন আরও বলেন, আমি আমার বোনের ছেলেকে লালন পালন করতে চাই।
নিহত নারী জায়েদার সতীন মোকারিমা বলেন, ২০০২ সালে জামিরদিয়া এলাকার ফারুকের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। আমাদের ঘরে তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। ছয় সাত বছর আগে জায়েদাকে সে গোপনে বিয়ে করে।
সেই ঘরে ৫ বছরের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। মেয়ের বয়স যখন ৪/৫ মাস তখন ফারুক আমার ঘরের সামনে মেয়েকে রেখে উধাও হয়। এরপর থেকে মাঝে মধ্যে আমাদের খোঁজ নিত। তবে নিয়মিত না। সে জায়েদাকে নিয়ে অন্য কোথাও ভাড়া থাকত।
হাসপাতালে ভর্তি শিশু জায়েদও ফারুকের সন্তান বলে প্রথম স্ত্রী মোকারিমা জানান।
তিনি বলেন, স্বামী চাইলে এই ছেলেকেও আমি লালন পালন করতে রাজি আছি।
নিহত জায়েদা খাতুনের স্বামী ফারুক মিয়া পেশায় ট্রাকচালক।
তিনি বলেন, জায়েদাকে বিয়ে করায় তার পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। তার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর জায়েদাও একাধিক বিয়ে করেছেন। এখন তিনি প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় বসবাস করছেন। জায়েদা খাতুনও তার ছেলেকে নিয়ে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন। তবে নির্দিষ্ট ঠিকানা জানা ছিল না। গত এক মাসে তার সঙ্গে জায়েদার তিনবার দেখা হয়েছে। ভালুকা থানা পুলিশের মাধ্যমে জায়েদার মৃত্যুর খবর পান তিনি।
কোতোয়ালী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কাসেম বলেন, ময়নাতদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ নিহতের ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার গোলাম ফেরদৌস বলেন, আল্লাহর রহমতে শিশুটি সুস্থ আছে। ওয়ার্ডে কর্মরত কর্মীরা তার দেখভাল করছেন।
আরও পড়ুন: নড়াইলে বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু