দীর্ঘদিন উপকূলীয় এলাকায় লোনাপানি বিদ্যমান থাকায় মৎস্য সংকটে অভাব অনটনে দিশেহারা জেলে পরিবার। বর্তমান নিষেধাজ্ঞা তাদের কাছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মতো। নিষেধাজ্ঞাকালীন খাদ্য সহায়তা হিসেবে জেলেদের চাল দেয়া হবে। কিন্তু করোনায় বিকল্প কোন কর্ম না থাকায় শুধু চাল নয় জেলেদের দাবি আর্থিক সহায়তা।
এদিকে, অসংখ্য জেলে এখনো নিবন্ধনের তালিকায় না আসায় সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিকরা ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না।
বরাবরের মতো ট্রলার মালিক ও জেলেদের অভিযোগ, ভারতে একই সময় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিগত সময়ের মতো বাংলাদেশের জল সীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাবে ভারতীয় জেলেরা।
অপরদিকে, নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা হওয়ার পরে সাগরে মাছধরতে যাওয়া জেলে নৌকা ও ট্রলারগুলো ফিরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বরগুনার পাথরঘাটায় বলেশ্বর থেকে বিষখালী নদীতে যাওয়ার ভারানি খালের দু'পারে শত শত ট্রলার নোঙ্গর করেছে। বেকার হয়ে পড়েছে এসব জেলেরা।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে আগামী ৩ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ
জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত পাঁচ মাস ইলিশ ধরার মৌসুম ,কিন্তু মৌসুমের অর্ধেক সময় কাটে নিষেধাজ্ঞায়।
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, বরগুনা জেলার অর্ধশতাধিক জেলে পাড়ায় আট হাজার ২২৭টি জেলে পরিবারের ৩৭ হাজার ২২ জন সদস্য রয়েছে। এসময়ে উপকূলীয় এলাকার জেলেদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তার পরিমাণ খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন জেলেরা। দীর্ঘ কর্মহীনতায় অনিবন্ধিত জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনের দিকে ধাবিত হবে।
বিভিন্ন মৎস্য পল্লীতে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকা সাগর ও নদ নদী ঘেষা জনপদের বেশি ভাগ মানুষ জেলে।সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও বাঁধাহীন প্রজননের জন্য অনেক জেলে নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছেন।
বিভিন্ন ঘাটে জেলেরা জানান, বরাদ্দকৃত চাল জেলেরা সময়মত পাচ্ছে না। যখন চাল পাচ্ছেন তখন জেলেদের কোনো উপকার হচ্ছে না। ফলে অনেক জেলে আইন অমান্য করে বাধ্য হয়ে মাছ শিকারে নদীতে নামছেন। ফলে আইনের বেড়াজালে বন্দী হচ্ছে অনেক জেলে। ভ্রাম্যমান আদালতে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। আবার অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে সরকারের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও বাঁধাহীন প্রজননের উদ্যোগ।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, আমাদের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে সামুদ্রিক মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। তারা বাংলাদেশি পতাকা ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ শিকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রক্ষার জন্য অবরোধ দিলেও ভারতীয় জেলেরা তা না মেনে ইলিশ শিকারে নেমে পড়েন।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদের মৎস্যজীবীদের জন্য আরও ৪৩৯.১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ
পাথরঘাটা উপজেলার নিজলাঠিমারা গ্রামের জেলে খলিলুর রহমান বলেন, মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোন কাজ জানা নেই জেলেদের। তাছাড়া মাত্র দু’এক মাসের জন্য কাজেও এদের কেউ নিতে চায় না। ফলে বাড়িতে অলস সময় কাটাতে হয়। যাদের সামান্য পুঁজি বা সঞ্চয় থাকে তা দিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ বহন করতে পারলেও অধিকাংশ জেলে পরিবার দু-এক বেলা কিংবা আধা পেট খেয়ে দিন পার করে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমরা তেমন কোন সুফল পাচ্ছি না। ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি তার। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিকদের ঋণ সহায়তার দাবি জানান।
আরও পড়ুন: বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করে সফল বিশ্বনাথের নাজিম
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩৬ হাজার ২২ জন। এর মধ্যে সমুদ্রগামী ২৭ হাজার ২৭৭ জেলে পাবে খাদ্য সহায়তার ৮৬ কেজি করে চাল।