বুধবার এ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে ও জোতবাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে আত্রাই ও ফকির্ণি নদীর উভয়তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৫০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এ দুই নদীর উভয়তীরের ৭ বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই সহস্রাধিক মানুষ। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দুর্গত এলাকার মানুষ বন্যানিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এসব এলাকার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে।
ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো হলো- পারনুরুল্লাবাদ, পারনুরুল্লাবাদ মন্ডলপাড়া, জোকাহাট, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, বাইবোল্যা ও পাঁজরভাঙা। বুধবার সকালে এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ধান, পাট ও সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ।
এর মধ্যে ২০১৭ সালের বন্যায় চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আর মেরামত করা হয়নি। এতে করে নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে এসব ভাঙনস্থান দিয়ে পানি ঢুকে দুই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে, পানির প্রবল চাপে আত্রাই ও ফকির্ণি নদীর উভয় তীরের বনকুড়া, দক্ষিণ চকবালু, জোকাহাট, চকরামপুর, উত্তর চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া, নিখিরাপাড়া, করাতিপাড়া, জোতবাজার, বাগাতিপাড়া, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, শামুকখোল, লক্ষ্মীরামপুরসহ অন্তত ৫০টি পয়েন্ট চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দিনরাত কাজ করছেন স্থানীয়রা। শুধু তাই নয় রাতে বাঁধে বসানো হয়েছে পাহারা।
বুধবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ইউএনবির এই প্রতিনিধি দেখেন, আত্রাই নদীর ডান তীরে পারনুরুল্লাবাদ থেকে মিঠাপুর পর্যন্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাত্র এক ফুট নিচে পানি অবস্থান করছে। কোথাও কোথাও মূল বাঁধ টপকে পানি পার হচ্ছে। বালুর বস্তা ফেলে পানি ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, এ দুর্যোগ মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কোনো সহযোগিতা করছে না এবং তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আত্রাই নদীর পানি হু-হু করে বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া পরিষ্কার হলে দু’একদিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে। পানি বাড়তে থাকায় বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো তদারকি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন।
এদিকে মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলামসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে বস্তাসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করে বাঁধ টিকিয়ে রাখার কাজে স্থানীয়দের সহযোগিতা করছেন।
এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল হালিম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিমসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
মান্দার ইউএনও আব্দুল হালিম বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, নওগাঁয় ছোট যমুনা বাঁধ ভেঙে আত্রাই উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকালে আত্রাই উপজেলার নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর-মালঞ্চি বেরিবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। নদীর পানি আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পাওয়াই আরও গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
ইতিমধ্যেই রাণীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ি, কৃষ্ণপুর, মালঞ্চি, দুর্গাপুরসহ কয়েকটি গ্রাম ও নদীর তীরবর্তি গ্রামগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই মহাসড়কটিও।