স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বুধবার সকাল ৯টায় কয়া ইউনিয়নের কালোয়া অংশে হঠাৎ করে রক্ষাবাঁধে ভাঙন শুরু হয়। দেখতে দেখতে বাঁধের ৩০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে যায়। এ সময় বাঁধের ওপর বসবাসরত কয়েকশ’ পরিবারের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম ভাঙন শুরু হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ওইদিন বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তার মাত্র দুই মাস আগে প্রমত্ত পদ্মার ভাঙন থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি রক্ষায় বাঁধটি নির্মাণ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ২টা ১০মিনিটে একই অংশে হঠাৎ করেই আবারও রক্ষাবাঁধে ভাঙন শুরু হয়। দেখতে দেখতে মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছিলেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে গত বছরের ৩০ জুন অসম্পূর্ণ প্রকল্পকে সম্পূর্ণ দেখিয়ে কাগজে কলমে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, প্রকল্পের নির্ধারিত পরিকল্পনাসহ নকশা লংঘন, অর্থ অপচয় এবং বরাদ্দকৃত টাকা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করে অব্যয়িত রাখায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি বর্তমানে ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া বাজার এলাকার আগে যে স্থানে বাঁধ ধসে গেছে, সেখানে আন্ডার গ্রাউন্ড আর্থ পরিস্থিতির কারণে ডিজাইনে শাল বুল্লি দিয়ে স্লপ তৈরির নির্দেশনা ছিল। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেই কাজটি না করার ফলেই এমন ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে নদী পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, এই রক্ষাবাঁধ আমাদের অভিশাপ ডেকে এনেছে। আমাদের বাড়ি নদী থেকে অনেক দূরে ছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা কাজ করার সময় বাড়ির সীমানা থেকে কয়েক মিটার কেটে ব্লক ফেলেছে। যার ফলে নদী একেবারে ঘরের কাছে চলে আসে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধের কালোয়া এলাকার কিছু অংশ ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙন এলাকায় ৯ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছে। ভাঙন রোধে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আরও দুই হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
এদিকে জেলার নিম্নাঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বুধবার সকালে ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় পানি। গত ১২ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আরও ২ সেন্টিমিটার, যা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।