ব্রাহ্মণবাড়িয়া,৭অক্টোবর (ইউএনবি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লি. এর ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষে কমিশনিং কাজ চলছে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ কমিশনিং শেষ হবে। এরপরই চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো.আবদুল মজিদ জানান, বর্তমানে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ । নির্মাণ কাজ শেষে কমিশনিং কাজ চলছে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ কমিশনিং শেষ হবে। এবং এরপরই চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার পরই বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব হবে।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান জানান,দেশের প্রথম অর্থ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রকল্পটি চালু হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ যেমন বাড়বে তেমনি জ্বালানি দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।
জানা যায়, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ২০০৩ সালের পহেলা জুন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন যাত্রা শুরু করে কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১১ সালে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন নিজস্ব অর্থায়নে ৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে।
আরও পড়ুন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় চালান মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে
দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে বিদ্যমান জ্বালানি ব্যবহার করে কম জ্বালানি দক্ষতা সম্পন্ন ইউনিটগুলোকে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ২০১৫ সালে ২০০ মেগাওয়াট মডিউলার পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (সাউথ) এবং ২০১৭ সালে আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (নর্থ) দুইটি স্থাপন হয় এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পুরাতন অবসরপ্রাপ্ত ইউনিটসমূহের (জিটি-এক, জিটি-দুই ও এসটি লে এসটি ইউনিট-তিন এর গ্যাস ব্যবহার করে উচ্চ ক্ষমতা ও জ্বালানি দক্ষতা সম্পন্ন আশুগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (পূর্ব) প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
প্রকল্পটি ২২শে সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে একনেকে এর অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পটি এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, এপিএসসিএল এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
গত ২০ মার্চ ২০১৮ সালে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান চীনা ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট ও এক্সপোর্ট করপোরেশন এবং চীনা ন্যাশনাল করপোরেশন ফর ওভারসিস্ ইকনমিক কোঅপারেশন এর সঙ্গে প্রকল্পটির ইপিসি চুক্তি সাক্ষরিত হয় এবং ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই চুক্তিটি কার্যকর হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ইপিসি চুক্তি মূল্য প্রায় এক হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নেট উৎপাদন ক্ষমতা ৪২০.০০ মেগাওয়াট এবং জ্বালানি দক্ষতা প্রায় ৫৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অন্যান্য অনুসাঙ্গিক ব্যয় (পরামর্শক, সিডি ভ্যাট, ট্যাক্স) সহ মোট ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২ লাখ ৯৩১ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা।
গত ১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী এর ডি-রেটেড উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট।
আশুগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (পূর্ব) প্রকল্পটি উৎপাদনে গেলে এপিএসসিএল-এর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রায় ১৭০০ মেগাওয়াট। এপিএসসিএল ডিপ্যান্ডেবল ও রিলেয়্যাবল বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পাসি হিসেবে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রকল্পটি গত জুন ২০২১ হতে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও বিশ্বজুড়ে করোনা সক্রমণের কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে এক বছর পিছিয়ে যায়। পরবর্তীতে জেনারেটরের কারিগরি ত্রুটি এবং গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির ফলে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুন: যৌথভাবে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট ১- এর কাজ সম্পন্নের ঘোষণা হাসিনা-মোদির