সংশ্লিষ্টরা জানান, সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামে শিকদারবাড়ির পারিবারিক পূজামণ্ডপে ২০১১ সালে বিভিন্ন দেব-দেবীর ২৫১টি প্রতিমা সাজিয়ে দুর্গোৎসব শুরু করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর সেখানে দেব-দেবীর প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলছিল। গত বছর ২০১৯ সালে ৮০১টি দেব-দেবীর প্রতিমা নিয়ে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে প্রতিমার মাধ্যমে বৈচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। দেখে মনে হয় দেব- দেবীরা যেন স্বর্গ থেকে মত্ত্যলোকে নেমে এসেছেন। কারিগরদের নিপুন হাতের ছোঁয়া আর রং তুলিতে মাটির প্রতিমা যেন দেব-দেবীর প্রতিচ্ছবি। পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে জাতিধর্ম নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ দর্শনার্থী আর ভক্তকুলের ঢল নামতো পূজামণ্ডপে।
প্রতি বছর দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার কিছুদিন পর আগামী বছরে উৎসব নতুন মাত্রায় নিতে আয়োজকদের প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রায় সারা বছর ধরে নানা প্রস্তুতি চলে। প্রতিমা শিল্পীরা ছয় থেকে সাত মাস আগে থেকে খড়-কুটা আর মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করতেন। দেশি-বিদেশি নানা রং আর অলংকার দিয়ে প্রতিমা সাজানো হতো। দুর্গোৎসবের তিন মাস আগে থেকে সাজসজ্জা আর আলোক সজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় কেটেছে কর্মীদের। মহামায়া দেবী দুর্গার সঙ্গী হিসেবে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের বিভিন্ন দেব-দেবী প্রতিমা সাজানো হতো এই পূজামণ্ডপে। এখন সেখানে কোনো আয়োজন নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশাল সেই পূজাপ্যান্ডেলে প্রবেশের দুটি পথই তালাবদ্ধ। সেখানে প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে না। বিগত বছরগুলোতে দুর্গাপূজার কয়েক মাস আগে থেকে সেখানে নানা প্রস্ততি দেখা যেত। কিন্তু এ বছর সব আয়োজন বন্ধ রয়েছে। আগামী ২১ অক্টোবর দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজা।
সনাতনধর্ম সম্পর্কে সমাজকে জাগ্রত করা ও বিশ্বকে সনাতন ধর্মের দেব-দেবীর পূজার মহত্ব জানানোর জন্য ২০১১ সাল থেকে ডা. দুলাল কৃষ্ণ শিকদার নিজ বাড়িতে বিশাল পরিসরে এই শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু করেন।
পূজার আয়োজক শিল্পপতি লিটন শিকদার বলেন, ‘মহামারির কারণে এ বছর আমরা উৎসব থেকে পিছিয়ে এসেছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এখানে এই মহাউৎসব পালন করা সম্ভব হবে না। প্রতিমা তৈরি করলে দেশি-বিদেশি লাখ লাখ দর্শনার্থী উৎসব দেখতে আসবে। তাই ঘটে পূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ দর্শনার্থীরা যেন না আসে এজন্য তিনি অনুরোধ জানান।
স্মৃতিকনা বিশ্বাস, কমলা দাস, তরুণ সরকারসহ বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, গত কয়েক বছর ধরে ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব মিলে তারা শিকদারবাড়িতে দুর্গোৎসব দেখতে যান। সেখানে গিয়ে দেব-দেবীর প্রতিমা দেখে তাদের মনে হতো তারা যেন স্বর্গপুরিতে এসেছে। এক পূজাপ্যান্ডেলে এতসংখ্যক প্রতিমা দেখে তারা অভিভূত হতেন। এ বছর দুর্গোৎসব হবে না এমন খবর তাদেরকে ব্যথিত করেছে।
প্রতিমা তৈরির কারিগর বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় বলেন, ‘প্রতিমা তৈরি করে যে অর্থ পাই তাই দিয়েই আমাদের সংসার চলে। প্রতিমা তৈরি ছাড়া বিকল্প কোনো কাজ আমাদের নেই। গত বছর প্রায় ছয় মাস ধরে তারা ১৫ জনে মিলে ৮০১টি দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করেন। চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দেয়া হয়। এ বছরও তাদের প্রতিমা তৈরির কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে না।’ কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিতায় আছেন তিনি।’
বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায় জানান, বাগেরহাটের শিকাদারবাড়িতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে। তবে এবার উৎসব হবে না। এছাড়া জেলার কোথাও এ বছর দুর্গোৎসব হবে না। কোনোরকমে পূজা হবে।