ছেলের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে অবশেষে সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলেন এক অসহায় বৃদ্ধ বাবা।
বুধবার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী সদর উপজেলার চরকাউয়ার নয়ানী গ্রামের বাসিন্দা মো. আনসার আলী এই হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্যে মো. আনসার আলী জানান, তার মেজ ছেলে আবুল কাশেম নান্নু কয়েকবারে তার প্রায় ১০ লাখ টাকার গাছ ও বাঁশ বিক্রি করে। আর এ কাজে তিনি যতবার বাধা দিয়েছেন ততবারই মারধর করেছে। এ নিয়ে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি নিজেদের বাড়িতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়। তবে ওই সালিশের রায় মেজ ছেলে নান্নু মেনে নেয়নি।
মো. আনসার আলী বলেন, এরপর ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি টাকা চেয়ে না পেয়ে নান্নু আমাকে বেদম মারধর করে এবং জোর করে বাছুরসহ একটি গরু নিয়ে যায়। তখন আমি বাদী হয়ে একই সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করি। জামিনে ছাড়া পেয়ে আমাকে আদালত চত্বরেই হুমকি দেয় সে। তখন আমি কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
আরও পড়ুন: মাগুরায় ছেলের হাতে বাবা খুন
তিনি বলেন, আমার দায়ের করা মামলায় সাক্ষী দেয়ায় দেলোয়ার মুন্সী নামে একজনকে মারধরও করে কাশেম। পরে ২০১৭ সালের ১ জুন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতেও একটি মামলা করি।
আনসার আলী বলেন, জাল দলিল দিয়ে নান্নু আমার কিছু জমি জোর করে চাষাবাদ করছে এবং জমিও দখল করতে চায়। চাষাবাদে বাধা দিলে আমাকে বসতঘর থেকে নামিয়ে দেয়। তখন থেকে আমার বড় ছেলে আলাউদ্দিন বাবুলের ঘরে থাকি। ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাল দলিলের জোরে নান্নু লোকজন নিয়ে আমার ২৮৪ শতাংশ জমির ধান ও একটি রেন্ট্রি গাছ জোর করে কেটে নেয়।
তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে গত ৫ বছর আমার সাথে ঝামেলা করে আসছে আবুল কাশেম নান্নু। আমি জীবিত থাকা অবস্থায় আমার জমির জাল দলিল তৈরি করে আমার জমি আত্মসাৎ করার পায়তারা করে আসছে।
আনসার আলী আরও বলেন, আমার স্ত্রী দুলুফা বেগম ২০১৫ সালে মারা যাওয়ার পর আবুল কাশেম নান্নু দাবি করে যে তার মা তাকে দলিল মূলে প্রায় ৫ একর জমি দিয়ে গেছে। কিন্তু আমি আমার স্ত্রীকে কোন দলিল দেইনি। আর নান্নু যে জাল দলিল তৈরি করেছে তার বড় প্রমাণ হলো, আমি দুলুফা বেগমকে ১৯৬৭ সালে ১৪ মার্চ বিয়ে করি। তবে বিয়ের ৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬১ সালের ২০ এপ্রিল সেই স্ত্রীকে কিভাবে জমি দিলাম।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে ছেলের হাতে মা খুন
বৃদ্ধ বলেন, এছাড়া আরও প্রায় দেড় একরের মতো জমি আমার মা কুলছুম বিবি দলিল মূলে দিয়েছে বলে নান্নু দাবি করছে। কিন্তু তার কাগজও আজ অব্দি দেখাতে পারেনি। নান্নু জোর করে কিছু জমি চাষাবাদ করছে এবং আরও অন্য জমি দখল করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি যে কোন সময় মারা যেতে পারি। আমি অনেক ঋণগ্রস্ত ছিলাম, যেই অর্থ আমার বড় ছেলে আলাউদ্দিন বাবুল পরিশোধ করার পাশাপাশি জরিপ কাজের খরচসহ বহু ব্যয় বহন করেছে। সেজন্য আমি তাকে আড়াই একর জমি দিয়েছি। আবার মেজ ছেলে নান্নুর লাখ লাখ টাকা দেনা হলে ১১৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে তা মিটিয়েছি এবং বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমা থেকেও মুক্ত করেছি।
আনসার আলী আরও বলেন, সবশেষ চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আমার তিন একর জমির ধান কেটে নিয়ে যায় নান্নু ও তার লোকজন। ওইসময় বাধা দিলে নান্নু ও তার ছেলে এমরান ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে আমাকে আহত করে। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই ঘটনায় আমার বড় ছেলে বাবুল বাদী হয়ে নান্নুসহ ৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ‘ছেলের’ হাতে বাবা খুন