মঙ্গলবার রাত সোয়া ১টার দিকে জোয়ারের পানির চাপে বাঁধের ১০ হাত জায়গা ভেঙে যায়।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর জরুরি ভিত্তিতে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয় ভেঙে যাওয়া ঘাটাখালির রিংবাঁধ। কিন্তু মেরামত কাজের ছয় মাসের মধ্যেই আবার ভাঙন দেখা দেয়ায় টেন্ডার ছাড়াই করা এ জরুরি কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাতক্ষীরার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (পওর) বিভাগ-২-এর আওতায় আম্পানের পর ঘাটাখালির বাঁধ মেরামত কাজে অনিয়ম এবং অদক্ষ লোক দিয়ে কাজে ফাঁকি ও অর্থ লোপাট হয়েছে। ফলে বাঁধ টেকসই হয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কাজের স্থানে জন-অবহিতকরণ সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে বাঁধ মেরামত কাজের কোনো সাইনবোর্ড সেখানে নেই। ফলে স্থানীয় মানুষ কাজ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দীন বলেন, ‘সরকার উপকূলবাসীকে দুর্যোগ-দুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে যথেষ্ট বরাদ্দ দিয়েছে এবং দিচ্ছে। তবে এসব বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় কয়রার মানুষকে এখনও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন ঘাটাখালি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তিন গ্রামের মানুষ ফের সংকটে পড়েছেন। বাঁধটি ভাঙা থাকলে বিল হবে না, তাই ঠিকাদার শ্রমিক পাঠিয়ে পুনরায় মেরামত কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আম্পানের পর ঘাটাখালির রিংবাঁধ টেকসইভাবে তৈরি না হওয়ায় সেটি আবারও ভেঙেছে। কোনো প্রকার সাইনবোর্ড না থাকার কারণে মেরামত কাজের স্বচ্ছতাও নেই। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে স্বচ্ছতা ফিরে আসা জরুরি।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার ১৪/১ ও ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের ৩২ স্থানে সংস্কার বা মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য সাড়ে আট কিলোমিটারের বেশি। এসব কাজ ডিপিএম পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অভিযোগে জানা গেছে, দরপত্র ছাড়াই হচ্ছে পাউবোর চলমান কাজ। অদক্ষ ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানোর কারণে বেশির ভাগ কাজই দায়সারা হচ্ছে। অনেক স্থানে বাঁধের ঢাল কেটে উঁচু করা হচ্ছে। মাটির কাজে সঠিক নিয়ম মানা হচ্ছে না। এ কারণে সংস্কার কাজ করার পরপরই অনেক স্থানে বাঁধ ধসে গেছে।
ভাঙনপ্রবণ দক্ষিণ বেদকাশির মেদেরচর ও চরামুখা এলাকার তিনটি স্থানে কাজ করা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন জানান, পাউবোর লোকজনের মৌখিক নির্দেশে কাজ করছেন তিনি। কার্যাদেশ, প্রাক্কলন অথবা অন্য কোনো কাগজপত্র তাকে দেয়া হয়নি। এ জন্য কোন কাজে কত বরাদ্দ তা তিনি জানেন না। কাজ শেষে মেপে দেখে বিল জমা দেয়া হয়।
মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাবলু জানান, তিনি দশহালিয়া এলাকার তিনটি স্থানে কাজ করছেন। তিনিও এ কাজের বরাদ্দ সম্পর্কে জানেন না বলে দাবি করেছেন।
পাউবোর কয়রা উপজেলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মশিউল আবেদীন বলেন, ‘সঠিক প্রক্রিয়া মেনে বাঁধ মেরামত কাজ করতে গেলে সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ আরও দীর্ঘ হবে। বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতিরও ঝুঁকি থাকে। বড় দুর্ঘটনা এড়াতেই জরুরি কাজ হিসেবে দেখিয়ে এ পদ্ধতিতে কাজ করা হয়।’
পাউবো সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘জরুরি মেরামতের কাজগুলো ডিপিএম পদ্ধতিতেই করা হয়। মেরামত কাজ শেষ হলে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মেপে বিল করা হয়।’