খাগড়াছড়ির পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সমাগম বেড়েছে। এতে ক্ষতি পুষিয়ে উঠছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের সুদিন ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
করোনার সময় থেকেই এই পর্যটন খাতে ধস নামতে শুরু করে। আঞ্চলিক সমস্যাসহ নানা কারণে মাঝেমধ্যে বন্ধ হয়ে যায় পর্যটন স্পটগুলো। ফলে পর্যটকের অভাবে লোকসানও গুণতে হয় বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের।
দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা।
এদিকে খাগড়াছড়ির আলুটিলা, রিছাং ঝর্ণা, জেলাপরিষদ পার্ক ঘুরে দেখা যায়- পর্যটক ভরপুর রয়েছে। পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন পর্যটকরা।
তবে খাগড়াছড়ি ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক মূলত সাজেক কেন্দ্রিক বেড়াতে আসেন। খাগড়াছড়িতে কম সংখ্যক কয়েকটি পর্যটনস্পট হওয়ায় সাজেক আসা যাওয়ার ফাঁকে স্পটগুলো ঘুরে যান পর্যটকরা।
পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাগড়াছড়িতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে নিত্য নতুন পর্যটন স্পট তৈরি করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ইকো-ট্যুরিজমের পাশাপাশি আধুনিকতার মিশেলে তৈরি করতে হবে এসব স্পট। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটবে।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী পরিতোষ ত্রিপুরা বলেন, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকের আসা-যাওয়া বেড়েছে। আগের তুলনায় বেচা বিক্রি বেড়েছে। সামনে শিক্ষার্থীদের স্কুল বন্ধ হবে। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসবে। প্রত্যাশা করছি পর্যটক আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা ও মেডিকেল ক্যাম্প
জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কের দোকানদার্ খুমালি ত্রিপুরা বলেন, কিছুদিন আগে বেচা বিক্রি ছিল না। সারাদিন অলস বসে থাকতে হতো।
এছাড়া এখন পর্যটকের সঙ্গে বেচা-বিক্রিও বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও পর্যটকের সমাগম হবে আশা প্রকাশ করেন খুমালি ত্রিপুরা।
গাড়ি চালক আব্দুল জলিল বলেন, পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। পর্যটক না থাকলে বেকার হয়ে পরেন গাড়িচালক এবং সহকারীরা।
মনটানা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো. রুবেল পারভেজ বলেন, সাজেক কেন্দ্রিক পর্যটক বেড়েছে। বেশিরভাগ গাড়ি খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চলে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাচ্ছে।
অরণ্য বিলাসের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রশীদ সাগর বলেন, হোটেলের বুকিং রয়েছে, তবে গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম। এ বছর সরাসরি পর্যটকরা দীঘিনালা চলে যাচ্ছে। এরফলে রাত্রিযাপন কমে যাচ্ছে পর্যটকদের।
খাগড়াছড়ি সাজেক কাউন্টারের লাইনম্যান মো. আরিফ বলেন, প্রতিদিন খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাতায়াত করে ৫০-৬০টি পর্যটকবাহী গাড়ি। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে ৮০-১০০ গাড়ি সাজেক যাতায়াত করছে।
জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কের তত্ত্বাবধায়ক থোয়াইংঅংগ্য মারমা বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ পর্যটক পার্কে আসছেন। ছুটির দিনগুলোতে দ্বিগুণের বেশি পর্যটক হয়। ইতোমধ্যে পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য কিডস জোন রয়েছে।
অনেকেই মনে করেন পাহাড়ে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যেগে এ খাত আরও এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: তিন ইউপিডিএফ কর্মী হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ