চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) যাওয়ার পথে চলন্ত শাটল ট্রেনের সঙ্গে গাছের ধাক্কা লেগে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় রাতভর উত্তাল ছিল চবি ক্যাম্পাস।
এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করেছেন ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন।
আরও পড়ুন: কমিটির দাবিতে চবি ফটকে ছাত্রলীগের অবরোধ
এর আগে, রাত সাড়ে ৮টার শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছালেই শিক্ষার্থীরা নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দেন। এসময় তারা আগুন জ্বালিয়ে প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থী আহতের জবাব ও শাটল ট্রেনের বগি বাড়ানোর দাবি জানান। এ ছাড়াও জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে হাটহাজারীর চৌধুরীহাট এলাকায় চট্টগ্রাম শহর থেকে শাটল ট্রেনের ছাদে করে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই শাটলের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ছাদে চড়ে যাতায়াত করেন। কয়েকদিন আগেই চৌধুরীহাট এলাকার একটি গাছের ঢাল নুয়ে পড়ে। এতে বৃহস্পতিবার বিকেলেও এক শিক্ষার্থী আহত হন। রাতে অন্ধকার থাকায় ক্যাম্পাসগামী ট্রেনের ছাদে থাকা শিক্ষার্থীরা গাছের ডালের ধাক্কায় আহত হন। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে ফতেয়াবাদ মেডিকেল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
লোক প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পার হওয়ার পর চৌধুরীহাট এলাকায় এলে গাছের একটি ডালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলে তিনজন ট্রেন থেকে পড়ে যান। এ ছাড়া ১৫-২০ জনের মতো আহত হন। তার মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের অনেকের মাথা ও মুখ ফেটে গেছে।
শুক্রবার দুপুরে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম আশেক জানান, চবিতে আহত ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ৩ জন আইসিইউতে, ৫ জন সার্জারী ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। বাকি ৮ জন ক্যাজুয়ালিটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: অতি বৃষ্টির কারণে চবির ২২ বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত
যারা ভর্তি আছেন তারা হলেন- আমজাদ হোসেন সোহাগ (১৮), খলিলুর রহমান (২২), অংসইনু মারমা (২১), তাইজুল ইসলাম (২১), আবু সাঈদ (২৪), মোহাম্মদ সান (২১), রাফসান (২৩), আসলাম(২২)।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ট্রেনের ছাদে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। তারা গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. মোরশেদুল আলম বলেন, রাতে ট্রেনের ছাদে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ১৫/২০ জনের মতো আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। আমরা আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকগুলোয় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি।
এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ১২টায় চট্টগ্রাম শিক্ষার্থীদের দেখতে যান চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
এসময় তিনি বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের পাশে প্রশাসন রয়েছে। চিকিৎসায় যাতে কোনো ত্রুটি না হয়, এজন্য আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি শাটল ট্রেন প্রতিদিন মোট ১৪ বার শহর-ক্যাম্পাস-শহর আসা যাওয়া করে। প্রতিটি শাটলে দশটি করে বগি আছে। ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর যাতায়াতে যা খুবই অপ্রতুল। প্রতি বছর শিক্ষার্থী বাড়লেও বাড়েনি শাটলের শিডিউল। বরং লোকবলের সংকটে করোনা-পরবর্তী বন্ধ করে দেওয়া হয় নিয়মিত শিডিউলের ডেমু ট্রেন। এতে ট্রেন ও বগি সংকটের কারণে প্রতিদিন গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন শিক্ষার্থীরা। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: চবি ফটকে তালা দিয়ে রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ