চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থাপিত কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা ফের বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (২১ জুন) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশের মাধ্যমে এটি বন্ধ ঘোষণা করে।
আগামী বৃহস্পতিবার (২২ জুন) থেকে এই সেবা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ডায়ালাইসিস পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিস বাংলাদেশ (প্রা.) লিমিটেড।
চমেক হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপিত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা শত শত কিডনি রোগী ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডায়ালাইসিস সেন্টারের সামনে সাঁটানো নোটিশে বলা হয়, অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে যে আগামী বৃহস্পতিবার ২২ জুন থেকে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিস সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) কর্তৃক সার্ভিস পেমেন্ট পরিশোধে বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব ও অসহযোগিতার কারণে হঠাৎ করে এ চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
আরও পড়ুন: চমেকে কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি বৃদ্ধি: সড়ক অবরোধ করে রোগীদের বিক্ষোভ
তিনি এ ধরনের স্বাস্থ্য সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে তিনি আন্তরিক নন।
নোটিশে বলা হয়, আগামী ২২ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিস সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) কর্তৃক সার্ভিস পেমেন্ট পরিশোধে বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব ও অসহযোগিতার কারণে হঠাৎ করে এ চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) ফরিদা ইয়াসমিনের নাম ও ফোন নাম্বার উল্লেখ করে সেবা বন্ধ বা চালুর ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এমনকি এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে তিনি আন্তরিক নন বলে উল্লেখ্য করা হয় ওই নোটিশে।
নোটিশে আরও বলা হয়- দীর্ঘদিন ধরে একই যুদ্ধ করে আমরা সম্পূর্ণভাবে ক্লান্ত, কেন হঠাৎ করে সেবা বন্ধ হলো। ডায়ালাইসিস এর মতো জরুরি সেবা বন্ধ করার কোন উদ্দেশ্য আমাদের নেই। কিন্তু এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে সেবা চালু রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সকল রোগীদেরকে বিকল্প ব্যবস্থা রাখার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, স্যান্ডর কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আমি যতটুকু জেনেছি তারা আজকেও ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বিল পাচ্ছে।
আর বকেয়া থাকবে ১৯ কোটি টাকা। সেটিও ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হবে। এ জন্য সেবা তো বন্ধ করতে পারে না। এটি এমন সেবা যা বন্ধ করলে জীবনহানির সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্যান্ডর কর্তৃপক্ষ যে ভাষায় নোটিশ দিয়েছে, সেটিও আপত্তিজনক। তারা অধিদপ্তরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেছে।
একই সঙ্গে তার মোবাইল নম্বর উল্লেখ করেছে।
বিষয়টি জানতে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (ব্যবসা ও প্রশাসন) মোহাম্মদ মনজুর রহমানকে ফোন করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে হঠাৎ করে এ সেবা বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণকারী রোগীরা।
এর আগে কাঁচামাল সংকটে অজুহাতে ফি বাড়ানোর ঘোষণা নিয়ে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে ডায়ালাইসিস সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখে স্যান্ডর।
এছাড়া ৮ জানুয়ারি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করা নিয়ে আন্দোলনে নামে রোগীরা। এতে পুলিশের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষ হয়।
এ নিয়ে মামলা এবং মোস্তাকিম নামে এক রোগীর ছেলে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন।
পরবর্তীতে সেই মোস্তাকিম জামিনে বের হয়ে তাকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে অভিযোগ করে আদালতে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন ও এসআই আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সেটি তদন্ত পরবর্তীতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
আরও পড়ুন: সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে হাড়ভাঙা রোগীর কিডনি অপসারণের অভিযোগ
বাংলাদেশের প্রথম ব্রেন ডেড নারীর কিডনি প্রতিস্থাপনে জীবন বাঁচল ২ জনের