প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব অর্জনের জন্য লিঙ্গ সমতা কোনো বিকল্প নয়, বরং অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ‘শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা কোনো ফল বয়ে আনবে না যদি বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা পিছিয়ে পড়ে।’
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে 'অ্যাক্সিলারেটিং দি ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজি৫ টুওয়ার্ডস অ্যাচিভিং পিস, প্রসপারিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি' শীর্ষক ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডার্সের বার্ষিক সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রতিটি দেশ আলাদা এবং তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গতিশীলতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন ঐতিহাসিক এজেন্ডা ২০৩০ গৃহীত হয়েছিল, তখন সবাই লিঙ্গ সমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে পারি না।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, নারী নেত্রী হিসেবে সবারই দায়িত্ব সব নারীর পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যদের পথ দেখাতে পারে এমন দৃষ্টান্ত তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, ‘লিঙ্গ সমতার বিশ্ব অর্জনের জন্য অবশ্যই আমাদের অবস্থান ও ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি দু’টি সুনির্দিষ্ট বিষয় তুলে ধরেন। সেগুলো হলো:
প্রথমত, সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতাকে আদর্শে পরিণত করার জন্য সকলকে অবশ্যই তাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি বাড়াতে হবে। নারীর অংশগ্রহণকে উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘নেতা হিসেবে আমাদের তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং এই বিষয়ে সাহসী উদ্যোগ নিতে তাদের উৎসাহিত করা দরকার।’
দ্বিতীয়ত, সবাইকে নিজেদের অবস্থানকে অংশগ্রহণ হতে নেতৃত্বের দিকে উন্নীত করতে হবে। সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করতে ও অন্যান্য নারীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হওয়ার জন্য নারীদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাব।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবিধানিক অঙ্গীকারের আলোকে সরকার জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়েদের শিক্ষা ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বিস্তর বিনিয়োগ করেছি। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা বিনামূল্যে করা হয়েছে। আমরা মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং বিনামূল্যে বই প্রদান করছি।’
তিনি আরও বলেন, সরকার প্রাথমিক স্তরের স্কুল শিক্ষকদের ৬০ শতাংশ নারী নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নারী উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করতে এবং তাদের অর্থায়নে সহায়তা করার জন্য নির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রেয়াতি হারে ঋণ নিশ্চিত করেছি।’
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার ব্যবসায়িক উদ্যোগে নারীদের উৎসাহ ও সহায়তার জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সরকারি সংস্থায় উচ্চ পদে নারীদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছি। নারীরা এখন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, রাষ্ট্রদূত, বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সমস্ত স্তরে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইসিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারী ও মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ১২ হাজার ২৯২টি ইউনিয়ন এবং পৌর ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে, যেগুলো একজন নারী ও একজন পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হয়, পাশাপাশি সরকার নারীদের ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো প্রযুক্তিগত স্টার্ট-আপ এবং ই-কমার্স সেক্টরসহ আইসিটি সেক্টরে লিঙ্গ সমতা অর্জন করা। আমরা লিঙ্গ-সংবেদনশীল বাজেট প্রবর্তনকারী প্রথম দেশগুলোর অন্যতম। আমাদের বাজেটের ৩০ শতাংশ নারী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয়।’