প্রচণ্ড শীত ও ক্ষুধায় প্রায় অর্ধশত শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন।
তিনি বলেন, অসুস্থ ১১ শ্রমিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্যদের তাদের নিজ নিজ অনশনস্থলে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
খুলনার স্টার, প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট, আলিম, ইস্টার্ন, দৌলতপুর, খালিশপুর এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং পাটকলের প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শ্রমিকেরা।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত একই দাবিতে ধর্মঘট এবং আমরণ অনশন পালন করেন রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা। ধর্মঘট চলাকালীন গত ১২ ডিসেম্বর প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আবদুর সাত্তার (৫৫) অসুস্থ হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কেএমসিএইচ) মারা যান। পরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করেন শ্রমিকরা।
তবে প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় গত শুক্রবার খুলনা শহরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর পুনরায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দেন সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
পাটকলগুলোর সরকারি-বেসরকারি মালিকানা বাতিল, পাট খাতের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা।
অনশনরত শ্রমিকরা জানান, মাসের পর মাস মজুরি-ভাতাসহ অন্যান্য দাবি না পূরণ হওয়ায় শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের সংসার আর চলছে না। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই তারা মিল ছেড়ে রাস্তায় নেমেছেন। সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভ মিছিলে কাজ না হওয়ায় শেষমেশ শুরু করেছেন আমরণ অনশন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কারো পক্ষে ঘরে ফেরা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অনশনরত শ্রমিকরা।
এদিকে শ্রমিকদের টানা কর্মসূচিতে খুলনার ৭টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে দৈনিক প্রায় কোটি টাকার পাটপণ্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. খলিলুর রহমান জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে অনশন কর্মসূচির সাথে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করা হবে।
স্টার জুট মিলের সিবিএ সভাপতি বেল্লাল মল্লিক জানান, তাদের ১১ দফা দাবির মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া ৫ সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ, অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ, মিলগুলোকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে না দেওয়া এবং মিলের যন্ত্রপাতি সংস্কার অন্যতম।