ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে দেশে প্রথম বারের মতো ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
বুধবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে ডিএনসিসির নগরভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডিএনসিসি স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়।
যেখানে সেখানে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে এবং নিরাপদ পার্কিং নিশ্চিত করতে পরীক্ষামূলকভাবে ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ চালু করেছে ডিএনসিসি।
গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোর থেকে ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং নামে এই পার্কিং অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে গুলশান এলাকার আটটি বিভিন্ন সড়কে ২০২টি স্পটে স্মার্ট পার্কিং চালু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডিএনসিসির মশকনিধন অভিযান: ১৩ মামলায় ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে নগরভবনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, দুর্বার গতিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটালাইড হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন আর দুর্বার গতিতে আমরা এগিয়ে যাই।
মন্ত্রী বলেন, ডাক্তারের সেবার জন্য ফোন করছেন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মানুষ যোগাযোগ করছে। বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও আজ মোবাইল ও ইন্টারনেটের আওতায় আছেন ও বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। দুর্বার গতিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তার একটি কারণ আমরা ডিজিটাল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার ডিএনসিসিতে স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং চালু হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য স্মার্ট সোসাইটি দরকার, স্মার্ট এডুকেশন দরকার, স্মার্ট গভার্ন্যান্স দরকার। সেটিও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হবে।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সভাপতির বক্তৃতায় বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং চালু হচ্ছে। এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সিএলডিপির (কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) আওতায় মিয়ামি সিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। সবার সহযোগিতায় এটি সফল হবে। পর্যায়ক্রমে উত্তর সিটির প্রতিটি এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অনলাইনে ট্যাক্স নিচ্ছে, যেখানে কোনো ক্যাশে হোল্ডিং ট্যাক্স নেওয়া হয় না। আমরা অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স নিচ্ছি। আপনারা কেউ হোল্ডিং ট্যাক্স সশরীরে এসে দেবেন না, সবাই অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করবেন।
তিনি বলেন, কারণ কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তা আছে যারা আপনাকে ‘আকাশের যত তারা সিটি করপোরেশনে তত ধারা’ এগুলো দেখিয়ে দেবে। তাই অনলাইন ওপেন করবেন আপনার ট্যাক্স আপনি দিয়ে দেবেন।
মেয়র আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স চালু করে দিয়েছি। কোনো অভিযোগ জানাতে আমরা সবার ঢাকা অ্যাপ চালু রেখেছি। যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে অনলাইনে অভিযোগ জানাতে পারছেন এবং আমরা তা সমাধান করে দিচ্ছি।
মেয়র বলেন, সবার ঢাকা অ্যাপে আসা অভিযোগগুলোর মধ্যে আমরা ৯৮ শতাংশ সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। এসব অনলাইন কার্যক্রমই হলো স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ। দুর্নীতিমুক্ত এবং জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেই আমরা এরকম অনলাইন সিস্টেম চালু করেছি। অনলাইনে জনগণের কাছে সব আধুনিক সেবা পৌঁছে দিচ্ছি।
আরও পড়ুন: উন্নয়নকৃত মাঠ ও পার্ক রক্ষায় ডিএনসিসি মেয়রের আহ্বান
ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং বিবরণ:
বিষয়- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাইলট আকারে স্মার্ট অনস্ট্রিট পার্কিং চালুকরণ সংক্রান্ত।
• ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য গুলশান এলাকায় গাড়ি পার্কিং কার্যক্রম মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে পরিচালনার জন্য পাইলটিং কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
• পাইলটির জন্য গুলশান এলাকার সড়ক নম্বর– ৫২, ৫৮, ৬২, ৬৩, ৬৪, ১০৩, ডিআইটি সাকুলার রোড, গুলশান ২ ইনার সাকুলার রোডে গাড়ি পার্কিং এর জন্য সড়কে প্রয়োজনীয় রং করাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
• ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ মাঠ পর্যায়ে আলোচ্য পাইলটিং কার্যক্রমটি তদারকি করা হবে। পাইলটিং কার্যক্রমের ফলাফলের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার আরও ২৯টি স্থানে উক্ত কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করা হবে।
• আলোচ্য পাইলটিং কার্যক্রম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং এলওসিসি যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
• নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি কার পার্কিং স্থানের সন্নিকটে ওয়ার্ডেন নিয়োজিত করা হবে।
• পার্কিং বরাদ্দ কার্যক্রম অ্যাপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।
• অ্যাপে প্রাথমিকভাবে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
• রেজিস্ট্রেশন শেষে গাড়ির ড্রাইভার পার্কিং স্পটের ১০০ মিটারের মধ্যে এসে গাড়ি পার্কিং করতে হবে।
• গাড়ির পার্কিং এর জন্য পেমেন্ট ব্যবস্থা ডিজিটাল করা হয়েছে।
• পিওসির মাধ্যমে অনগ্রাউন্ডে পেমেন্ট করা যাবে।
ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং ফি-
কার/জিপ/মাইক্রোবাস:
প্রথম দুই ঘণ্টা ৫০ টাকা, তৃতীয় ঘণ্টা ৫০ টাকা এবং চতুর্থ ঘণ্টা থেকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০০ টাকা।
মোটরসাইকেল:
প্রথম দুই ঘণ্টা ১৫ টাকা, তৃতীয় ঘণ্টা ১৫ টাকা এবং চতুর্থ ঘণ্টা থেকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ৩০ টাকা।
শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পার্কিং ফি প্রযোজ্য হবে। রাত ১০টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পার্কিং এর জন্য কোনো ফি লাগবে না। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন পার্কিং সম্পূর্ণ ফ্রি।
আরও পড়ুন: খালের আধুনিকায়নে ডিএনসিসির সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী