পুলিশের গাফিলতি তদন্ত কমিটির প্রধান পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. রুহুল আমীন বৃহস্পতিবার এ কথা জানান। বিকালে দুই দিনব্যাপী ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, ‘২৭ তারিখের যৌন হয়রানির ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, ম্যানেজিং কমিটি ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের গায়ে আগুনের ঘটনা এড়ানো যেত। প্রাথমিকভাবে নুসরাতের ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসির ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাফিলতির বিষয়ে তদন্ত চলছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হতে আরও তিন-চার দিন সময় লাগতে পারে। নথিপত্র যাচাই-বাছাই চলছে।’
ডিআইজি বলেন, ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনেক খারাপ হিস্ট্রি রয়েছে। যা গভর্নিং বডির সদস্যরাও জানতো। যদি তার ব্যাপারে আগে ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে আজকে এধরনের ঘটনা ঘটতো না। এই ঘটনার সাথে স্থানীয় রাজনীতির বিষয়ও জড়িত রয়েছে।’
ডিআইজি মো. রুহুল আমীনের নেতৃত্বে একজন পুলিশ সুপার, দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন পরিদর্শক এ তদন্তে উপস্থিত ছিলেন।
মাদরাসার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার তারা মাদরাসার শিক্ষকদের সাথে কথা বলেন এবং ঘটনা সম্পর্কে তাদের মতামত গ্রহণ করেন। তারা কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য, রাফির পরিবার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মচারীদের মতামত গ্রহণ করেন।
বুধবার তারা রাফির বাড়িতে গিয়ে রাফির পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে সোনাগাজী আলহেলাল একাডেমি সংলগ্ন সামাজিক কবরস্থানে গিয়ে রাফির কবর জিয়ারত করেন।
জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার তিন দিন পর পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার প্রাথমিক তদন্তের বিষয়গুলো উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) একটি প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে সোনাগাজীর সাবেক ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন। পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা ৪/৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি।