ফেনীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে ইউনিসেফের উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। তাঁবুতে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত ১ অক্টোবর থেকে ২০ শয্যার ওই তাঁবুতে এ চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়।
শনিবার (১২ অক্টোবর) থেকে রবিবার (১৩ অক্টোবর) দুইদিনে প্রায় ৫২ জন শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শয্যার তাঁবুতে স্থাপিত ওয়ার্ডে ১৮ শিশু ভর্তি রয়েছে।
প্রতিটি শয্যার পাশেই একটি করে স্ট্যান্ড ফ্যান, একটি করে স্যালাইন স্ট্যান্ড ও একটি করে রোগীদের ওষুধ রাখার ছোট ক্যাবিনেট রয়েছে।
এসময় কথা হয় ১০ মাস বয়সি মেয়ে সাফওয়ানকে নিয়ে আসা আলাউদ্দিনের সঙ্গে। শুক্রবার সকালে মেয়েকে ভর্তি করেছেন।
তিনি বলেন, মেয়ের অবস্থা এখন অনেকটা উন্নতির দিকে। তাঁবু হলেও এখানে খুব সুন্দর পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা চলছে।
মিজানুর রহমান নামে আরেকজন অভিভাবক বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার এক বছর বয়সি ছেলে আবদুল্যাহকে ভর্তি করেন। এরইমধ্যে সে সুস্থ হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে স্যালাইনসহ ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বন্যার পর থেকে ডায়রিয়া পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। বন্যার পানিতে ফেনী সদর হাসপাতালের নিচ তলা ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়।
শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভিড় জমান। দিনে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। অনেক রোগীকে হাসপাতালের বারান্দা ছাড়াও বাইরে গাছের নিচে বসেও চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর ইউনিসেফের পক্ষ থেকে তাঁবু স্থাপন করে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ২০ শয্যার একটি ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু করে।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসিফ ইকবাল বলেন, হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য শয্যা বরাদ্দ মাত্র ১৮টি। অথচ ভর্তি করতে বা চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে শতাধিক রোগীকে। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্যই নতুন ওয়ার্ডটি চালু করা হয়েছে। এখনও প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তবে অক্টোবরে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর হার কিছুটা কম রয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, ইউনিসেফের সহায়তায় স্থাপিত তাঁবুতে শিশুদের জন্য আলাদাভাবে ২০ শয্যার একটি ওয়ার্ড চালু করা অত্যন্ত সময় উপযোগী হয়েছে। যদিও হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবিকা স্বল্পতা রয়েছে তবুও এ পৃথক ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন গড়ে ফেনী সদর হাসপাতালে শিশুসহ শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থাকেন। ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এ তাঁবুটি এখানে থেকে যাবে। তাঁবুতে ইপিআই ক্যাম্পসহ বিভিন্ন রকম সেবা কার্যক্রম চলবে। এ ছাড়া বিশেষ জরুরি সেবাও সেখানে দেওয়া হবে।