বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে পটুয়াখালীর বাউফলে ২ জন ও পিরোজপুরে ২ জন এবং ঝালকাঠিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- রুবি বেগম, অনিল পাল, হেলেনা বেগম, মিনারা বেগম, মাহিয়া আক্তার, রাতুল ও সুফিয়া বেগম।
জানা গেছে, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিরোজপুরে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে ঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা।
এ সময় ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছচাপায় রুবি বেগম নামে এক নারী মারা যান। এছাড়াও ঝড় থেমে যাওয়ার পর গ্রামের একটি খাল থেকে অনিল পাল নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি বলেন, রবিবার সকালে ঘর থেকে বের হয়ে অনিল পাল ঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যে পড়েন। ধারণা করছি, ঝড়ের কারণে সম্ভবত তিনি খালের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। ঝড় থামার পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখীতে সুনামগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আহত ২০
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে পিরোজপুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিহত পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে এবং ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করে পরে জানানো হবে।
পিরোজপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রমজান আলী বলেন, ঝড়ের পরে রুবি বেগম নামে এক নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এ ঝড়ে এখন পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছ।
এদিকে ঝালকাঠির সদর উপজেলার শেখেরহাট, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন ও কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে ঝড়ের সময়ে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলেন- শেখেরহাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মিনারা বেগম, আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের মৃত আলম গাজীর স্ত্রী হেলেনা বেগম ও পোনাবালিয়া এলাকার মো. বাচ্চুর ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মাহিয়া আক্তার ঈশান।
রবিবার বেলা ১১টার দিকে ঝড় শুরু হয়।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ঝালকাঠিতে ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে দুই উপজেলায় এক শিশু ও দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা হবে।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ঝড়ে ঝড়ে রাতুল নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
রাতুল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে- বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে সে মারা গেছে।
আর সুফিয়া বেগম দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী। ঘরের উপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মারজান বলেন, রাতুলকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, তার শরীরে বজ্রপাতে ঝলসানোর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারে।
দাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে সুফিয়া বেগম মারা যান।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখী ঝড়ে ভোলায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, নিহত ২