কালবৈশাখী
বরিশাল বিভাগে কালবৈশাখী ঝড়ে নিহত ৭
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে পটুয়াখালীর বাউফলে ২ জন ও পিরোজপুরে ২ জন এবং ঝালকাঠিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- রুবি বেগম, অনিল পাল, হেলেনা বেগম, মিনারা বেগম, মাহিয়া আক্তার, রাতুল ও সুফিয়া বেগম।
জানা গেছে, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিরোজপুরে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে ঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা।
এ সময় ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছচাপায় রুবি বেগম নামে এক নারী মারা যান। এছাড়াও ঝড় থেমে যাওয়ার পর গ্রামের একটি খাল থেকে অনিল পাল নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি বলেন, রবিবার সকালে ঘর থেকে বের হয়ে অনিল পাল ঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যে পড়েন। ধারণা করছি, ঝড়ের কারণে সম্ভবত তিনি খালের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। ঝড় থামার পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখীতে সুনামগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আহত ২০
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে পিরোজপুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিহত পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে এবং ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করে পরে জানানো হবে।
পিরোজপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রমজান আলী বলেন, ঝড়ের পরে রুবি বেগম নামে এক নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এ ঝড়ে এখন পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছ।
এদিকে ঝালকাঠির সদর উপজেলার শেখেরহাট, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন ও কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে ঝড়ের সময়ে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলেন- শেখেরহাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মিনারা বেগম, আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের মৃত আলম গাজীর স্ত্রী হেলেনা বেগম ও পোনাবালিয়া এলাকার মো. বাচ্চুর ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে মাহিয়া আক্তার ঈশান।
রবিবার বেলা ১১টার দিকে ঝড় শুরু হয়।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ঝালকাঠিতে ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে দুই উপজেলায় এক শিশু ও দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা হবে।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ঝড়ে ঝড়ে রাতুল নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
রাতুল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে- বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে সে মারা গেছে।
আর সুফিয়া বেগম দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী। ঘরের উপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মারজান বলেন, রাতুলকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, তার শরীরে বজ্রপাতে ঝলসানোর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারে।
দাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে সুফিয়া বেগম মারা যান।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখী ঝড়ে ভোলায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, নিহত ২
কালবৈশাখীতে বাগেরহাটে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু, আহত ৮
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা ভেঙে ও বজ্রপাতে লিকচান সরদার নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘর-বাড়ি, দোকানপাট ও ফসলের খেত। এদিকে বিদ্যুতের ৩৪টি খুটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে ৪ লাখ গ্রাহক।
রবিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে এই কালবৈশাখী ঝড় ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু
এলাকাবাসী জানায়, হঠাৎ করেই শুরু হয় দমকা হাওয়াসহ ঝড়। সঙ্গে চলে বজ্রসহ বৃষ্টি। এই ঝড় বৃষ্টি ও বজ্রপাতে লিকচান সরদার নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। এসময় ঝড়ে গাছপালা ও ঝুলন্ত বিলবোর্ড পড়ে ৮ জন আহত এবং একটি যাত্রীবাহী বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০০ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঝড়ে বাগেরহাট সদর, কচুয়া, রামপাল, ফকিরহাট, শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পল্লীবিদ্যুৎ ও ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ৩৪টি বিদ্যুতের খুটি ভেঙে পড়ায় শনিবার সকাল ১০টা থেকে বাগেরহাটের ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।
বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুতের এজিএম সুশান্ত রায় বলেন, ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের কমপক্ষে ২০টি খুটি ভেঙে যায় এবং অসংখ্য স্থানে বিদ্যু্তের তার ছিঁড়ে গেছে। ফলে সকাল ১০ টা থেকে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা বিদ্যুৎ লাইন মেরামতের কাজ করছে।
বাগেরহাট ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহি প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, ঝড়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি বিদ্যুতের খুটি ভেঙে গেছে এবং অনেক এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। সকাল ১০টা থেকে শহরের ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে।
বাগেরহাট বাসাবাটি গির্জার ফাদার ডমিনিক হালদার জানান, কয়েক মিনিটের ঝড়ে মারিয়া পল্লির ২০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। পল্লির বাসিন্দাদের ঘরের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবাই কষ্টে দিন পার করছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ের সময় কচুয়ায় মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় কিছু কাঁচাঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেশ বিছু গাছপালা উপড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের খুটি ভেঙে গেছে এবং তার ছিঁড়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় বজ্রপাতে মাছচাষির মৃত্যু
সিলেটে বজ্রপাতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
কালবৈশাখীতে সুনামগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আহত ২০
সুনামগঞ্জে তাণ্ডব চালিয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। এতে লন্ডভন্ড হয়েছে ঘর-বাড়ি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন ও খেতের ফসল।
রবিবার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা সদর, বিশ্বম্ভরপুর শান্তিগঞ্জ, দিরাই উপজেলার উপর দিয়ে এই কালবৈশাখী ঝড় ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে ঢাকাবাসীর স্বস্তি
ঝড়ের কবলে পড়ে নারী শিশুসহ অন্তত ১৫ জন এবং শহরের কালিবাড়ি এলাকায় চলন্ত সিএনজির উপর গাছ ভেঙে পড়ায় চালকসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
আহতরা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বৈষভেড় গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা যায়।
ঝড়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পাগলা, কান্দিগাঁও, রায়পুর আসামপুর, বাঘেরকোনাসহ একাধিক গ্রামের শতাধিক কাঁচা ও টিনশেডের ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাগলাবাজার। বাজারের সড়কের দুই পাশের অস্থায়ী দোকানপাট লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে সড়কে পড়ে যায়।
এদিকে সুনামগঞ্জ সড়কের হাছন তোরণ এলাকায় একাধিক গাছ ভেঙে সড়কে পড়ায় দুই পাশের পরিবহন আটকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং ঘণ্টাব্যাপী ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের চেষ্টায় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফসলি জমি-বাড়ি বিধ্বস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইন
পাগলা কান্দিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইয়াকুব শাহরিয়ার বলেন, পাগলাবাসী এমন ঝড় আর দেখেনি। দুমড়েমুচড়ে গেছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এলাকার অনেক ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. নিরুপণ রায় চৌধুরী বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে আহত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঁচজন রোগী আসেন। তাদের মধ্যে সাদ্দাম নামের এক যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে। রয়েল নামের আরেক যুবক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কচুয়ায় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়, লন্ডভন্ড অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি
কালবৈশাখীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফসলি জমি-বাড়ি বিধ্বস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কালবৈশাখীর আঘাতে অন্তত ৩০-৩৫টি ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন ও খেতের ফসল।
এছাড়া, উপড়ে পড়েছে গাছ-বৈদ্যুতিক খুঁটি, ঝড়ের কবলে পড়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে কালবৈশাখী ঝড়: তিন উপজেলার দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
রবিবার (৩১ মার্চ) সকাল দিকে সদর উপজেলা দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়।
সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ওমর ফারুক বলেন, কালবৈশাখীর আঘাতে অন্তত ৩০-৩৫টি ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে৷
এছাড়া, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে উড়শিউড়া এলাকায় সুলতানপুর পল্লী বিদ্যুতের উপকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বেশ কয়েকটি খুঁটি ও অসংখ্য গাছ। বর্তমানে এই এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
আরও পড়ুন: কচুয়ায় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়, লন্ডভন্ড অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি
কালবৈশাখীর কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে শার্শার আম চাষীরা
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) কালবৈশাখীর আঘাতে যশোরের শার্শা উপজেলার আম চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ঝড়ের কারণে ওই এলাকার আমের বাগান সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আম মাটিতে পড়ে যায়।
জানা গেছে, উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর আমের বাগানের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ১৪০টি ছোট-বড় আম বাগান রয়েছে এবং প্রায় সব বাগানই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আম চাষিরা এখন এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন, কেউ কেউ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতির কথা জানিয়েছেন।
আম চাষি জাফর শেখ কালবৈশাখীর কারণে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে বাগুড়ি গ্রামের দিলবার জানান, এ বছর আমের ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে।
আরও পড়ুন: ভুরুঙ্গামারীতে কালবৈশাখীর তান্ডবে দুই শতাধিক বসতবাড়ি লন্ডভন্ড
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল এলাকার আম চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চাষিদের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা যায়নি বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই এলাকায় কালবৈশাখী আঘাত হানে। ঝরে পড়া আম বাগানগুলোকে কার্পেটের মতো ঢেকে দিয়েছে।
ফলে বেশিরভাগ বাগানই উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছচাপায় কিশোর নিহত
ভুরুঙ্গামারীতে কালবৈশাখীর তান্ডবে দুই শতাধিক বসতবাড়ি লন্ডভন্ড
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর পাঁচটি ইউনিয়নের কিছু এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ে দুই শতাধিক বসতবাড়ি, গাছপালা ও বোরো ধান খেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এতে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
বুধবার (১৮ মে) ভোর চারটার দিকে ভুরুঙ্গামারী সদর, পাইকেরছড়া, চর ভুরুঙ্গামারী, শিলখুড়িসহ বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হয়। যা প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলমান থাকে। এতে কালবৈশাখী তান্ডবে দুই শতাধিক বসতবাড়ি, গাছপালা, বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক মেসবাহুল জানান, ভোররাতে হঠাৎ তার পাইকেরছড়া গ্রামে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হয়। ঝড়ে তার গ্রামের রব্বানী, আমিনুল ও জলিলের বসত ঘর ভেঙে পড়াসহ বেশ কিছু বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও এলাকার কয়েকটি স্থানে গাছ বৈদ্যুতিক তারের ওপর উপড়ে পড়া ও বৈদ্যুতিক সিড়ি পরে যাওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে করে দুর্ভোগে রয়েছেন কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বলেও তিনি জানান।
পাইকেরছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আবু সাহাদাত মো. বজলুর রহমান বলেন, ভোররাত চারটার দিকে শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ওয়ার্ডের ২০-২৫টি পরিবারের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এবং ঝড় ও বৃষ্টিতে অন্তত ১শ’ একর জমির পাকা ও আধাপাকা বোরো ধান খেত হেলে পড়াসহ পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝড়ে আমার বসতবাড়ির দুটি ঘরসহ গাছপালা ভেঙে পড়েছে। সেগুলো মেরামতে কাজ করছি আমি, যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ঝড়ে গাছচাপায় নারীর মৃত্যু
ঢাকার বাতাসের মান কিছুটা ‘উন্নত’
এই সপ্তাহে কালবৈশাখী এবং মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ঈদের ছুটির কারণে ঢাকার বাতাসের মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১২ টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) এ ৮৬ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে খারাপ বায়ু মানের সঙ্গে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ১৬ তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷
ঢাকার একিউআইকে 'মধ্যম' হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
ভারতের দিল্লি, দুবাই এবং চিলির সান্তিয়াগো যথাক্রমে ১৮০, ১৭২ এবং ১৬২ স্কোর সহ তালিকায় প্রথম তিনটি স্থান দখল করেছে।
আরও পড়ুন: ৮ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
বিশেষ করে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে 'খারাপ' বলে মনে করা হয়।
২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোর 'খারাপ' বলা হয়, যেখানে ৩০১ থেকে ৪০০ এর স্কোর 'ঝুঁকিরপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের জন্য কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হল, ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
ঠাকুরগাঁওতে কালবৈশাখীর আঘাতে নিহত ১, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলায় শুক্রবার মধ্যরাতে শিলাবৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ কালবৈশাখীর আঘাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রচন্ড ঝড়ে জেলার বেশকিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা ধ্বংস হয়েছে।
নিহত সঞ্জয় কুমার মন্ডল (২৮) জয়পুরহাট সদর উপজেলার বাসিন্দা।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, দুই ঘণ্টাব্যাপী ঝড়ে জেলায় ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির বোরো ধান, পাট, ভুট্টাখেত নষ্ট হয়েছে।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখী ঝড়ে সন্দ্বীপে স্পিডবোট ডুবি, শিশুর লাশ উদ্ধার
প্রবল বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি প্রায় ৪০ মিনিট ধরে স্থায়ী ছিল। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন জানান, শিলাবৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ে ভুট্টা, বোরো ধানসহ আম ও লিচু গাছের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কর্মকর্তারা মাঠ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করার চেষ্টা করছেন।
নীলফামারী মডেল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা জানান, ঝড়ে একটি ভবনের টিনের ছাদ উড়িয়ে কলেজের প্রধান ফটকের ওপরের অংশ ভেঙে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন জানান, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাকে জানানো হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ফটিকছড়িতে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ চাপায় গৃহবধূর মৃত্যু
কালবৈশাখী: শিমুলিয়ায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ফেরি সচল
কাল বৈশাখী ঝড়ের কারণে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে এই লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। লঞ্চ ঘাটে আটকেপড়া যাত্রীদের ফেরিতে করে পারাপারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মাইকিংও করা হয়েছে। ঘাটে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লঞ্চে উঠা যাত্রীদের ফেরিতে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সহকারি পরিচালক ও মাওয়া সহ-বন্দর কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, কাল বৈশাখীর আশঙ্কা ও শিমুলিয়া নদী বন্দর অভ্যন্তরীণ নৌপথে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সঙ্কেত বলবৎ থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম।
এই দুই নৌপথে ৮৫টি লঞ্চ চলাচল করছিল। ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলাচল করলেও ঈদের কারণে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত রাত ১০টা পর্যন্ত চলাচল করছিল। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে শুক্রবারও রাত ৯টা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ৬টা থেকে আবার চলাচল শুরু করে।
আরও পড়ুন: ঈদযাত্রা: বরিশাল লঞ্চঘাটে যাত্রী কানায় কানায় পূর্ণ
শিমুলিয়ার পরিবর্তে পাটুরিয়া দিয়ে যান চলাচলের অনুরোধ নৌপ্রতিমন্ত্রীর
কুড়িগ্রামে ঝড়ে গাছচাপায় নারীর মৃত্যু
কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছচাপায় এক নারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে উপজেলা সদরের শিবেরডাঙ্গী গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সুফিয়া বেগম (৪০) একই এলাকার দুলাল মিয়ার স্ত্রী।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখী ঝড়ে সন্দ্বীপে স্পিডবোট ডুবি, শিশুর লাশ উদ্ধার
চর রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা জানান, শরীরে গুরুতর আঘাত নিয়ে সুফিয়া বেগমকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। তবে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্তী জানান, খবর পেয়ে নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহতের পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হবে বলেও জানান ইউএনও।