সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিএনডির ভেতরে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে হাইপ্রেসারের পানির পাম্প লাগালেও কার্যত সেভাবে কোনো কাজে আসেনি। একদিকে পাম্প দিয়ে পানি সরানো হচ্ছে অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে পুনরায় পানি জমে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এই এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। তাই স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তবে শিমরাইল পাম্প হাউজের কর্মকর্তাদের দাবি, পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা আর্বজনার কারণে ডিএনডির ক্যানেল দিয়ে সেচ খালে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই কারণে চারটি পাম্প চালানো যাচ্ছে না।
ডিএনডির অভ্যন্তরের ফতুল্লা পিলকুনি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার ও সোলায়মান মিয়া জানান, হালকা ও ভারী বর্ষণের পানিতে ডিএনডির প্রজেক্ট অভ্যন্তরের নিচু এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে মিজমিজির পাইনাদী, সিআইখোলা, কালাহাতিয়ার পাড়, নতুন মহল্লা, মজিববাগ, রসুলবাগ, নয়াআটি, নিমাইকাশারী, তুষার ধারা, বক্সনগর, হাজীগঞ্জ, গিরিধারা, সাহেবপাড়া, বাঘমারা, সাদ্দাম মার্কেট, জালকুড়ি, হাজীনগর, মাতুইয়াল, শহীদ নগর, সবুজবাগ, ভূইঘর, দেলপাড়া, ডগাইর, মাতুয়াইল, সানারপাড়, টেংরা, কোদালদাহ, নয়াপাড়া ও ধনকুন্ডাসহ বিভিন্ন নিচু এলাকার অনেক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, সবজি খেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থান ভেদে ডিএনডির অভ্যন্তর এখন এক থেকে দেড় ফুট পানিতে ডুবে আছে। এতে ডিএনডির অভ্যন্তরে বসবাসরত কয়েক লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পাইনাদী শাপলা চত্বর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে শাপলা চত্বর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ডিএনডির অভ্যন্তর থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এ ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
আরেক বাসিন্দা ইব্রাহিম জানান, ময়লা-আবর্জনা ও নর্দমার সাথে বৃষ্টি পানি মিশে একাকার হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাস্তাগুলো ডুবে যাওয়ায় বিভিন্ন পেশার লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিমরাইলের পাম্প হাউজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম প্রসাদ জানান, সোমবার পাম্প হাউজের পাম্প চালু থাকা অবস্থায় পানির উচ্চতা ছিল ২ দশমিক ৯ মিটার। আবার পাম্প বন্ধ থাকা অবস্থায় ৩ দশমিক ৫ মিটারে চলে আসে। যেখানে শুষ্ক মৌসুমে পানির উচ্চতা থাকে ২ দশমিক ৫ মিটার। গত তিনদিনের থেমে থেমে ভারী বর্ষণে ডিএনডির অভ্যন্তরে স্থান ভেদে দেড় থেকে দুই ফুট পানিতে ডুবে আছে। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তবে ডিএনডির জলাবদ্ধতা দূর করতে দশদিন সময় লাগবে বলে জানান এই প্রকৌশলী।
পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব জানান, ডিএনডির প্রধান নিষ্কাশন খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। নিষ্কাশনে খালে পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনা এসে জমা হচ্ছে। তা আবার পরিষ্কার করে তবে পাম্প চালাতে হচ্ছে।
১৯৬৫-৬৮ সালে রাজধানী ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানা এলাকার ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে ডিএনডি বাঁধটি নির্মিত হয়। ১৯৮৮, ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় সারা দেশ পানিতে ডুবলেও ডিএনডি বাঁধ ছিল বন্যামুক্ত।