মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পরমেশ্বর্দী ইউনিয়নের জয়পাশা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আব্দুর রহমান বাশার মিয়ার সাথে একই গ্রামের পরমেশ্বর্দী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা চাঁন মিয়ার দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
প্রায় আড়াই দশক ধরে চলা দ্বন্দ্বে উভয়পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। পাল্টপাল্টি মামলাও হয়েছে। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৮ সালে ৫ অক্টোবর খুন হয় কিশোর নাজিম।
সম্প্রতি দুপক্ষের মধ্যে আবার সংঘাত শুরু হয়। মাঠ থেকে কলাই চুরির মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে বাড়ি ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ কোনো মামলা বা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বা হামলার আশংকা রয়েছে।
আরও পড়ুন: শেরপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ১, আহত ১০
আব্দুর রহমান বাশারের ছোট ভাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রউফ সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, ‘চাঁন মিয়া চেয়ারম্যানের ভাই হবিবুর রহমানের মদদে ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ ওমর আলী, ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহিদ মেম্বার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের লোকজনের কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় হামলাকারীরা ২২টি বৈদ্যুতিক মিটার, ১৫টি নলকূপের মাথা, তিনটি টেলিভিশন, ১৬টি রাজহাঁস, দুটি গরু, দুটি ছাগল, গ্যাসের চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডার, ৮টি ফ্রিজ, স্বর্ণালংকার এবং নগদ ৪ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক হওয়া শিবির নেতা বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকে কর্মরত সৈয়দ ওসমান গণি ও হবিবুর রহমান সাহিদ মেম্বারদের অর্থ ও মদদ দিয়ে থাকে। ওসমান গণি ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে উদীচির অনুষ্ঠানে বোমা হামলার সাথে জড়িত ছিল বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সাহিদ মেম্বার বলেন, ‘তারা বার বার সাদা ডুগ দেয় আমরা একবার লাল ডুগ দিয়ে দিলাম। বাশার মিয়ার লোকজন আমাদের পক্ষের জয় নামের একটি ছেলেকে ২০ ফেব্রুয়ারি মারপিট করে তার পিতা মিঠু শেখকে ধরে নিয়ে যায়। রাতভর তাকে আটকে রেখে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে ভোর বেলা ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের লোকজন তাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। তবে কেউ লুটপাট করেনি। লুটপাটের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
মামলা না করার কারণ উল্লেখ করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুর রহমান বাশার বলেন, ‘পুলিশের কাছ থেকে সেরকম সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। আস্থাহীনতার কারণে মামলা করিনি। ঘটনার দিন বার বার থানা এবং ডহরনগর ফাঁড়ির পুলিশকে জানালেও পুলিশ পৌঁছতে অনেক সময় নেয়। পুলিশের সামনে ভাঙচুর করলেও পুলিশ হামলাকরীদের বাধা দেয়নি।’
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় শহীদ মিনারে হামলার সময় ককটেল, ছুরিসহ আটক ২
চট্টগ্রামে বিচারকের ওপর হামলা: আ’ লীগ নেতার ছেলের ৫ বছর কারাদণ্ড
অভিযোগ অস্বীকার করে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, ‘সংঘর্ষের পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।’
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। থানা পুলিশের কাজে সন্তুষ্ট না হলে তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পারে। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’